ছেড়া বস্তা আর খানাখন্দে সয়লাব কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ফলে করোনার কারণে দীর্ঘ সময় পর সৈকতে ঘুরতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। সাতার না জানা পর্যটকরা হাঁটু পানিতে নেমে গোসলে নেমে এসব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, বিচ রক্ষায় ব্যবহৃত জিও ব্যাগের আশপাশে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। আর তাদের উদ্ধারে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ স্থানীয় সেচ্ছাসেবী রেসকিউ টিমের সদস্যদের।
পর্যটকদের অভিযোগ সি বিচ রক্ষায় বড় বড় জিও ব্যাগ ড্রোজার দিয়ে বালু ভর্তি করা হয় মাত্র ১০ ফুট পাশ থেকেই। ফলে অল্প পানিতে বোঝার উপায় থাকে না বিচে কোনো গর্ত আছে কিনা। প্রতিদিনই গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন।
কুয়াকাটার মূল সৌন্দর্য ১৮ কিলোমিটার সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি জায়গায়জুড়ে ছেড়া বস্তা আর বড় বড় গর্ত। ভাটার সময় গর্তগুলো চোখে পড়লেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে সমান হয়ে যায়। ফলে পর্যটকরা গোসলে নেমে গর্তে পড়ে ঢেউয়ের সঙ্গে গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
বাগেরহাট থেকে ঘুরতে আসা আবু-বকর (২৩) জানান, কয়েকজন বন্ধু সৈকতে গোসল করতে নেমে গর্তে পড়ে যাই। পরে সাহায্য চাইলে ওয়াটার বাইকের কালু নামের এক ড্রাইভার আমাকে কিনারায় নিয়ে আসে। জায়গাটা যে এত গভির তা বুঝতে পারিনি।
কুয়াকাটা সৈকতের পূর্বে ঝাউবন ও পশ্চিমে লেম্বুর বন এলাকায় পর্যটকদের বিচরণের উপযোগী। কিন্তু এখানে সব বয়সর মানুষ ঘুরতে আসে না। তাই জিরো পয়েন্ট একালায় তুলনামূলক বয়স্ক মানুষ দুর্ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছেন।
সৈকতের চা দোকানি সবুজ বলেন, বস্তা ও গর্তের কারণে প্রতিদিন কারো হাত কারো পা ভাঙছে। বিশেষ করে বয়স্করা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। এখান থেকে স্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করা যায় না।
সি বিচ ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটন খান জানান, ওয়াটার বাইক দিয়ে পর্যটকদেরকে সমুদ্র কাছাকাছি ঘুরিয়ে দেখানো হয়। কিন্তু গর্তের কারণে প্রতিদিন কেউ না কেউ ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে। ওয়াটার বাইকের চালকরা কাছাকাছি থাকায় পর্যটকদের উদ্ধার করছে। একমাসে কমপক্ষে ৪০-৫০ পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সেক্রেটারি জেনারেল আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় অনেক সৈকতে লাইফ গার্ড থাকলেও কুয়াকাটায় নেই। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈকত রক্ষায় যে জিও টিউব ও বস্তা দিয়েছে তাতে সৈকত রক্ষা হচ্ছে না বরং সৈকতের সৌন্দর্য বিনষ্ট ও পর্যটকরা ঝুঁকিতে পড়ছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোন সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, সৈকতে খানাখন্দের কারণে পর্যটকরা গোসলে নেমে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পর্যটকদের সতর্ক করতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, সৈকত রক্ষায় বস্তা দেওয়ার ফলে যে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। তারা যেন পর্যটক বিচরণের এলাকার বাইরে থেকে বালু উত্তোলন করে সেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নদী বন্দর / বিএফ