ডাকাতিয়া নদীর তীর দখল করে চলছে ইট, পাথর আর বালুর ব্যবসা। বিশেষ করে শহরের সিএসডি খাদ্যগুদাম এলাকা থেকে শুরু হয়ে লন্ডন ঘাট এলাকা পর্যন্ত পুরো এলাকা এখন প্রভাবশালীদের দখলে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও ফের বেদখল হয়েছে ডাকাতিয়ার তীর ভূমি। নদী তীরবর্তী পাড় দখল করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু প্রভাবশালী মহল।
২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ডাকাতিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করেন বর্তমানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। কিন্তু বছর না ঘুরতেই আবারো আগের চেহারায় ফিরেছে পুরো এলাকা। দিন দিন নদীটি পরিণত হচ্ছে খালে।
ইতোমধ্যে চাঁদপুর শহরের ট্রাকঘাট হয়ে লন্ডনঘাট পর্যন্ত বিশাল এলাকা অবৈধভাবে দখল করে চলছে ইট, বালু, কংক্রিট ও সিমেন্টের ব্যবসা। বিআইডব্লিউটিএর জায়গা দখল করে তাদের নাকের ডগায় বসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
স্থানটি মূলত আবাসিক এলাকা ও প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় ধুলাবালির কারণে পথচারী, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বাসিন্দা পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। বিশেষ করে ধুলাবালির কারণে ঘরের পরিবেশ ও আসবাবপত্র নোংরা হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এর পাশেই রয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশে ইট, বালু ও কংক্রিটের ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এলাকাটি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। সে সময় সাধারণ মানুষের বসার জন্য নদীর পাড়ে মাচাও তৈরি করে দেয়া হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে আবারো অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে গেছে নদী তীরের জায়গাটি।
গত বুধবার দুপুরে সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা স্তূপ করে ইট, বালু ও কংক্রিট রেখে পুরো এলাকাটি দখল করে রেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় জানান, তারা এখানে অসহায়। যারা এখানে ব্যবসা করছেন তারা সবাই প্রভাবশালী। তাদের নিয়ে কথা বললে উল্টো তাদের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়দের একজন বললেন, ‘গরমের সময় খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ধুলাবালিতে ঘরে থাকা যায় না। পুরো ঘর ধুলাবালিতে ভরে যায়।সারাদিন বালুর গাড়ি আসা যাওয়া করে। তাই রাস্তা দিয়েও হাঁটা যায় না। বিকেলে একটু নদীর পাড়ে বসে সময় কাটাব, সেই জায়গাটুকুও নেই।’
ট্রাকঘাট এলাকার রাস্তার পাশের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা বেশি কিছু বুঝি না। তবে সারাদিন গাড়ি চলাচল করাতে দোকানের কোনো মালামাল ভালো রাখতে পারি না। সব ময়লা হয়ে যায়। একটু পর পর পরিষ্কার করা লাগে।’
এ বিষয়য়ে বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মো. কায়সারুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁদপুরের নদী তীরভূমির অর্থাৎ ফরশোর ভূমি আমরা এখনো বুঝে পাইনি। তারপরেও মূল সড়কের পাশে ইট-বালুর ব্যবসা মানুষের বিড়ম্বনার কারণ। খুব শিগগিরই এসব অবৈধ দখল বা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নদী বন্দর / জিকে