চুয়াডাঙ্গায় দুই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে। সোমবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে কারা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বদর ঘটকের ছেলে আজিজুল হক ওরফে আজিজ (৫০) ও একই গ্রামের আলী হিমের ছেলে মিন্টু ওরফে কালু (৫০)।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজিজুল ও মিন্টুর সঙ্গে শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষবারের মতো দেখা করেন তার স্বজনরা।
আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু জানান, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন আজিজুল ও মিন্টু। কিন্তু সেটি নামঞ্জুর করেছেন তিনি। তারপর থেকে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার জোরগাছা হাজিরপাড়া গ্রামের দুই নারীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুই নারীর গলা কেটে দেওয়া হয়।
পরদিন এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অন্য দুজন হলেন- একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের সুজন ও মহিউদ্দিন। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় আসামি মহিউদ্দিনের মৃত্যু হয়। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর আসামি পক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখলেও অন্য আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। চলতি বছরের ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান সুজন।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই আসামির ফাঁসির আদেশ আসে। ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি গ্রহণ করে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র বলেছে, ফাঁসির জন্য যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জল্লাদ মশিয়ার রহমান, কেতু কামালসহ বেশ কয়েকজনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এছাড়া ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতসহ ইতোমধ্যে রায় কার্যকরের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য আদেশ এসেছে। দুই আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে শেষ দেখা করে গেছেন অর্ধশতাধিক লোক। সোমবার রাতে আজিজুল ও মিন্টুর ফাঁসি কার্যকর করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রায় কার্যকরের সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
নদী বন্দর / বিএফ