রংপুরে টানা সাত ঘণ্টার বৃষ্টিতে রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি সব জায়গা পানিতে একাকার। পানি ঢুকেছে বাড়িঘরেও। কোথাও কোমর পানি, আবার কোথাও হাঁটু পানি। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় নগরীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার (৩ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে সোমবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২২ মিলিমিটার।
জানা যায়, রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে টইটুম্বুর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র অবলম্বন শ্যামা সুন্দরী ও কেডি ক্যানেল। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় পানিবন্দি অবস্থাতেই চলছে বিভিন্ন এলাকার মানুষের যাতায়াত।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করেছে। বেশির ভাগ রাস্তা তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নগরীর সেনপাড়া, নিউ সেনপাড়া, আদর্শপাড়া, বাবুখাঁ, কামার পাড়া, জুম্মাপাড়া, গোমস্তপাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সিপাড়া, মুলাটোল আমতলা, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অন্তত শতাধিক পাড়া-মহল্লার অলিগলিসহ প্রধান সড়কে পানি উঠে গেছে। নিচু এলাকার বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
পশ্চিম মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, ‘গত বছরের বৃষ্টিপাত অনেক ক্ষতি করেছিল। সেই থেকে বৃষ্টি এলেই এক অজানা আতঙ্ক কাজ করতো, রাতে ঘুম হতো না। এ বছরেও রোববারের টানা বৃষ্টিপাতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। ঘরে-বাইরে পানি জমে থাকায় বের হওয়া যাচ্ছে না।’
মুন্সিপাড়ার আবু আলম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগের শেষ নেই। বৃষ্টি কমলেও আকাশ এখনো মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার। আবার বৃষ্টি শুরু হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃষ্টি আরও দুই-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এভাবে বৃষ্টিপাত হলে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত দুই দিনে ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ বছরে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত।
তিনি আরও জানান, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
নদী বন্দর / বিএফ