হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সর্ব বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আসন্ন। এখনো এক সপ্তাহ বাকী থাকলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দরজায় কড়া নাড়ছে দেবী-দুর্গার আগমনী বার্তা। বিশেষ করে দুর্গা প্রতিমার রং তুলি দিয়ে নানা রঙ্গে প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছেন, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ৭২টি মন্দিরে শারদীয় দুর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় জাকজমকপূর্ণ ভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। এখন শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এ উৎসবকে ঘিরে উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে দেখা দিয়েছে পূজার আমেজ। নতুন পোশাক কেনা-কাটা করছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। হাট-বাজার সহবিভিন্ন মাকের্ট ও শপিং মহলে ভীড় বেড়েছে। মন্দিরের সাজ-সজ্জ্বা শুরু হয়েছে।
পূজা সুষ্ঠ,সুন্দর ও শান্তিপূর্নভাবে পালনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তুতিমূলক সভা। বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, দিন রাত কাজ করে প্রতিমা শিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে মা দুর্গা সহ বিভিন্ন প্রতিমা। যেন দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। তবে এবার রং, তুলির ও সাজসজ্জার দাম বেশি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কারিগর। প্রতিমা শিল্পী শুশীল পাল (৬০) কাজ করছেন মোরেলগ্ঞ্জ কেন্দ্রীয় হরিসভা মন্দিরে। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করছেন। তার বাবা-দাদাও প্রতিমা তৈরি করতেন। সারা বছরই প্রতিমা তৈরি করে জীবিকা চালান বলে জানিয়ে শুশীল পাল বলেন, “দুর্গাপূজা এলে আমাদের কাজ বেড়ে যায়। এ সময় কর্মচারীদের বেতন দিয়েও আমাদের লাখ খানেক টাকা আয় হয়ে থাকে।”এ পেশায় এই একটি মৌসুম ছাড়া সারা বছর কোনো কাজ থাকে না। তখন কি করে দিন চলবে? সেই অনিশ্চয়তার কারণেই লোক কমে যাচ্ছে ।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার দুর্গাদেবী আসবে ঘোড়ায় চড়ে, আর যাবেন দোলায় চড়ে। দুর্গোউৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গা উৎসব।
১২ অক্টোবর দেবীর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর দেবীর মহাঅষ্টমী, (কুমারী পূজা, সন্ধি পূজা) ১৪ অক্টোবর দেবীর নবমী এবং ১৫ অক্টোবর দশমী পূজা, (সমাপন ও দর্পন বিসর্জন)। এবং সন্ধ্যায় আরত্রিকের পর প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
প্রতিমা শিল্পী সোমনাথ পাল জানান, এক সেট প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিন্ম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় তাদের ৩-৪ হাজার টাকার মত। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবং পাশাপাশি সব দ্রব্যের দাম বেড়েছে, এ জন্য লাভ কম হবে বলে জানান তারা।
মোরেলগঞ্জে ৭২টিমন্দিরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে পূজা উদযাপন হবে বলে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহব্বায়ক জানান শিব সজল যীশু ঢালী জানান।
বাগেরহাট-০৪ আসনের এম.পি জনাব আমিরুল আলম মিলন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল ও রাষ্ট্রীয় ভাবে অনুদান অচিরেই মন্দিরে মন্দিরে পৌছে দেয়া হবে। পূজা উদযাপন নির্বিঘ্নে করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ প্রদান করেন।
মোরেলগঞ্জ থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, মণ্ডপ গুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত ছাড়াও পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া র্যাব ,বিজিবি ও আনসার বাহিনী থাকছে।।
নদী বন্দর / পিকে