খুলনার মাঠে মাঠে দুলছে রোপা আমনের শীষ। সোনালি ধানের গন্ধে ম ম করছে চারিদিক। এ পর্যন্ত আসতে কৃষকের মাথার ঘাম পায়ে ঝরেছে। এখন কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে আমনের শীষ। কিন্তু সেই হাসির মধ্যে কৃষকের কপালে একটু হলেও চিন্তার ভাঁজ ফেলতে শুরু করেছে বিরূপ আবহাওয়া।
চলতি মাসেই প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাতেই চিন্তা বাড়ছে কৃষকের। কৃষি কর্মকর্তারাও বলছেন সে কথা। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে বেশ ভালো ফলন হবে।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা মেট্রোসহ জেলার নয় উপজেলায় ৯৩ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। এতে করে গত অর্থবছরের তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ আবাদের মধ্যে খুলনা জেলার রূপসায় ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ১৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ১ হাজার ৯২০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ১৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর, পাইকগাছায় ১৭ হাজার ২৫৩ হেক্টর, তেরখাদায় ৯০৫ হেক্টর, দাকোপে ১৯ হাজার ১৩৫ হেক্টর, কয়রায় ১৪ হাজার ৭২০ হেক্টর, ফুলতলায় ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর, দৌলতপুরে ৬৭ হেক্টর ও লবণচরায় ২০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে।
গত অর্থবছরে খুলনা মেট্রোসহ নয়টি উপজেলায় ৯২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়। আর আবাদের বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর।
বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত খুলনার কয়রা উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার কৃষক শেখ সিরাজুদ্দৌলা লিংকন, আব্দুল জব্বার সানা, সুজিত বাইন বলেন, আইলার পর থেকেই কয়রায় ভালো ফসল হয়।
কিন্তু প্রাকৃতি দুর্যোগ পিছু ছাড়ে না। ফসল ঘরে তোলার আগেই দেখা যায় কোনো না কোনো দুর্যোগ হানা দেয়। এবারও আমনের ফসল খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া দপ্তর ঝড়-বৃষ্টির আভাস দিয়েছে। যা আমাদেরমতো কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
কৃষি অধিদপ্তর খুলনার পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয় তাহলে খুলনায় রোপা আমন আবাদে প্রত্যাশিত ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে রোপা আমন আবাদে বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে।
পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আলোর ফাঁদ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের সাথে উঠান বৈঠকও করা হচ্ছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রত্যাশিত ফলন আশা করা হচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের পাশে থেকে মাঠপর্যায়ে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। পোকামাকড়ের কবল থেকে রেহাই পেতে কৃষকরা আলোর ফাঁদ ব্যবহার করছেন।
তেরখাদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা আধুনিক জাতের ধানের বীজ বপন করেছে। আধুনিক জাতের এ বীজে ফলন ভালো হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রোপা আমনের বাম্পার ফলন আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, কৃষকদের উঠান বৈঠক করানো হয়। ধানের রোগ-বালাই বিশেষ করে কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে জমিতে আলোর ফাঁদ ব্যবহারের জন্য কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ছয় মেট্রিক টন আশা করছেন তিনি।
দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত কাজ করছেন। পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদের আলোর ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রত্যাশিত ফলন আশা করছেন তিনি।
রূপসার নৈহাটী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের চাষি মো. ওমর আলী শেখ বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আমনের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরেক চাষি মো. খোরশেদ আলম বলেন, আমনের ফলন এবছর ভালো আশা করা হচ্ছে। ইলাইপুর দণিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম শেখ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় খোঁজ নিলে একই ধরনের মন্তব্য করেন কৃষকরা।
নদী বন্দর / পিকে