নদী ভাঙনের শিকার ৯ হাজার ৪৪৫টি পরিবারকে দুই শতাংশ জায়গাসহ পাকা ঘর করে দেবে সরকার। ইতোমধ্যে এসব গৃহহীনদের তালিকা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বছর বন্যা ততো তীব্রভাবে হয়নি। কিন্তু নদী ভাঙন খুব তীব্র হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ৬ সেপ্টেম্বর আমাকে নির্দেশনা দেন, নদী ভাঙনে কতো মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে সেই তালিকা করতে। আমরা দেই সপ্তাহের মধ্যে তালিকা করতে সক্ষম হয়েছি। ৯ হাজার ৪৪৫টি পরিবার গৃহহারা হয়েছে, সেই তালিকা আমরা করেছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এই তালিকা তার কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিতে। সবাইকে দুই শতাংশ জায়গাসহ পাকা ঘর করে দেওয়া হবে। আর অস্থায়ীভাবে তাদের টিন ও গৃহ নির্মাণের জন্য মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও আমরা তাঁবু বণ্টন করেছি অস্থায়ী বসবাসের জন্য।
নদী ভাঙনে রোধের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, সেই ডেল্টা প্ল্যানের মধ্যে একটি হটস্পট হচ্ছে নদী ব্যবস্থাপনা। সেই ব্যবস্থাপনার আওতায় রয়েছে নদীতে টেকসই বাঁধ দেওয়া, নদী খনন করে নাব্যতা সৃষ্টি করা। ২০৩১ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা-জাইকার প্রতিনিধিরা কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলার নদী শাসন করে বন্যা ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সব দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সফলতা অর্জন করেছি। কিন্তু ভূমিকম্প মোকাবিলায়, সত্যি কথা বললে, এখন পর্যন্ত আমাদের সেই সক্ষমতা হয়নি। তবে আপনাদের জন্য সুখবর বাংলাদেশ সরকার বিল্ডিং কোড করেছে। এই কোড মেনে আগামীতে বাড়ি করলে, তা ভূমিকম্প সহনীয় হবে। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রায় তৈরি করা হয়েছে।
পুরোনো ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করতে জাইকার সঙ্গে একটি সমঝোতায় হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ৫০ বছর মেয়াদী একটা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। প্রথম ধাপে রড-সিমেন্ট ব্যবহার হয়নি, পুরোনো ১০০-৪০ বছরের পুরনো বাড়ি এগুলোকে ভেঙে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী নতুন করে করে দেব জাপান সরকারের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তায়। সম্প্রতিকালে যেগুলো হয়েছে সেগুলো আমরা পরিদর্শন করবো। অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন দিয়ে এর ভূমিকম্পের সহনীয়তা পরীক্ষা করা হবে। ভূমিকম্প সহনীয় না হলে সংস্কারের মাধ্যমে তা ভূমিকম্প সহনীয় করা হবে।
এনামুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনার জন্য ১৫০ কোটি টাকা দিয়ে ৩৫ থেকে ৬৫ মিটার পর্যন্ত উদ্ধার কাজ করতে সক্ষম লেডার কেনার প্রস্তুতি নিয়েছি। এ টাকা দিয়ে ১১টি লেডার কেনা যাবে। এরমধ্যে দুটি দেব ঢাকায়, তিনটি চট্টগ্রামে আর বাকিগুলো ছয়টি বিভাগীয় শহরে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৪৫৬টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটাকে ৫৫০টি উন্নীত করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিভিল ডিফেন্স লোকদের আরও দক্ষ করে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স একাডেমি নামে একটি একাডেমি করার জন্য মুন্সিগঞ্জে ১০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেটার কাজ শুরু হয়েছে।