নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনা পাড়ে বসছে ইলিশের হাট। জেলার হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার নদী তীর ও দুর্গম চরের অন্তত ২০ পয়েন্টে বসেছে ইলিশের এ অস্থায়ী হাট।
প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৪-২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণে রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এসময় ইলিশ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছেন না মানিকগঞ্জের জেলেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীতে শত শত নৌকা নিয়ে জেলেরা ইলিশ শিকার করছেন। তবে প্রশাসনের অভিযানের প্রতি সবারই রয়েছে কড়া নজর। নদীতে কোনো নৌকা অথবা স্পিডবোট আসতে দেখলেই সর্তক হয়ে যান তারা। কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, প্রশাসনের লোক মনে করে অনেকেই জাল ফেলে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যান।
তবে কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞার শুরুর দিকে নদীতে তেমন ইলিশ মেলেনি। তবে ৩-৪ দিন ধরে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ছোট-বড় সব সাইজের ইলিশই মিলছে নদীতে।
শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া চরের খেয়া ঘাটের কাছে যেতেই চোখে পড়ে কয়েকশ’ মানুষের জটলা। পলিথিন টাঙ্গিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী দোকান। ইলিশের অস্থায়ী হাট হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে এ জায়গাটি।
নদী থেকে ইলিশ ধরে জেলেরা এখানে এনে বিক্রি করছেন জেলেরা। মৌসুমি এ হাটে রয়েছে পাইকারও। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন ইলিশ কিনতে। এ হাটে এক কেজি ওজনের ইলিশ ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। নিষিদ্ধ ইলিশের এ হাটে পুরুষের চেয়ে নারী ক্রেতাই বেশি। নারীরা স্কুল ব্যাগ এবং ভ্যানেটি ব্যাগে করে বিশেষ কায়দায় মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কয়েকজন নারী ক্রেতা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় কমদামে ইলিশ পাওয়া যায় বলেই তারা কিনতে এসেছেন। খাওয়ার জন্য ৩-৪ কেজি মাছ কিনেছি। যদি পুলিশ ধরে তাহলে মাছ দিয়ে দিবো।
আলোকদিয়া চরের এক জেলে জানান, ইলিশের হাটে সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা আসেন। এরমধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। খাবারের কথা বলে মাছ কিনলেও তারা বেশির ভাগই বিক্রেতা। চরে থেকে কম দামে মাছ কিনে এলাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন।
কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন, যারা প্রকৃত জেলে তারা জেলেকার্ডসহ সরকারি সুবিধার আওতায় আসেনি। একারণে পেটের দায়ে অনেকে ইলিশ শিকার করছেন। কারণ চরের বেশির ভাগ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে সরকারি সুবিধা পেয়েছেন এমন অনেক জেলেও ইলিশ শিকার করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় একেকজন জেলে দিনে অন্তত ১৫-২০ হাজার টাকার ইলিশ বিক্রি করেন। এ লোভে সবাই নদীতে নামছেন। পেশাদারের পাশাপাশি মৌসুমি জেলেও রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘাটে কিছু নৌকা ও স্পিডবোট চালকদের সঙ্গে জেলেদের চুক্তি রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে অভিযানের তথ্য দিচ্ছেন তারা। এ কারণে প্রশাসনের কর্তারা নদী পাড়ে আসলেই তথ্য পেয়ে যাচ্ছে জেলেরা। শিবালয় উপজেলা পরিষদ চত্বরেও বসিয়ে রাখা হয় জেলেদের নিজস্ব লোক। ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ড অথবা মৎস্য কর্মকর্তা অফিস থেকে বের হওয়া মাত্রই মোবাইল ফোনে জেলেদের কাছে খবর পৌঁছে দেন তারা। এ সময় জেলেরা নদী থেকে নৌকা সরিয়ে বিভিন্ন কূলে আশ্রয় নেয়।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন সুলতানা বলেন, ইলিশ ধরা ও বিক্রয় বন্ধে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু অভিযান শুরুর আগেই কিভাবে যেন জেলেরা তথ্য পেয়ে যান। যে কারণে অনেক সময় অভিযান ফলপ্রসূ হয় না। এ কারণে অভিযানেও নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে ২১ জেলেকে আটক করা হয়। এসময় মাছসহ ৩০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। আটক জেলেদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে।
নদী বন্দর / বিএফ