যৌতুক দিতে না পারায় এবং স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় রাজধানীর আশুলিয়ায় স্ত্রী স্বর্ণা বেগমের (৩৫) শরীরে গরম তেল ঢেলে দেন সুজন মিয়া (৩৮)। এরপর ১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গত ৬ অক্টোবর মারা যান স্বর্ণা।
এ ঘটনায় স্বর্ণার মা শিরিনা বেগম গত ১ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এই মামলার সূত্র ধরেই মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাতে জামালপুর থেকে পলাতক সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা জামালপুরে সুজন মিয়ার গ্রামের বাতিতে থাকতেন। সুজন মিয়া স্থানীয় বাজারে রেডিমেড গার্মেন্টসে দোকানদারি করতেন। তাদের সংসারে ওমর ফারুক সিফাত নামে ১১ বছর বয়সী ছেলে এবং খাদিজা নামে দুই বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দেওয়ায়, সংসারের ভরণপোষণ ঠিকমতো না দেওয়া এবং যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই নির্যাতন করায় তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়।
মুক্তা ধর বলেন, এর আগেও যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে গুরুতর জখম করায় নিহত স্বর্ণার দুলাভাই মো. ময়নুল ইসলাম বাদী হয়ে সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে জামালপুরের সরিষাবাড়ি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে সুজন মিয়া ২ মাস ১৯ দিন জেলও খাটেন। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় সুজন মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নুল ইসলাম মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই স্বর্ণার ওপর আবারও শুরু হয় নির্যাতন। নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে প্রায় ছয় মাস আগে সন্তানদের নিয়ে স্বর্ণা বেগম তার বাবা-মায়ের কাছে সিরাজগঞ্জে চলে যান। আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্যে তার সন্তানদের মায়ের কাছে রেখে আশুলিয়ার জিরানীতে একটি গার্মেন্টসে হেলপার হিসেবে প্রায় তিন মাস কাজ করেন স্বর্ণা।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, এরপর সুজন মিয়া কৌশলে তার স্ত্রীর ঠিকানা জোগাড় করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেখানে গিয়ে আবারও যৌতুকের দাবিতে ঝগড়া বিবাদ শুরু করেন। কিন্তু স্বর্ণা যৌতুক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার শরীরে গরম তেল ঢেলে দেন সুজন। এতে স্বর্ণার শরীরের অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তাকে আশুলিয়া থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান সুজন। কিন্তু সেখানে স্ত্রীকে ভর্তি না করেই ফেলে রেখে পালিয়ে যান তিনি।
তিনি আরও বলেন, পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বর্ণা বেগমকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠায়। সেখানে প্রায় ১২ দিন চিকিৎসাধীন থেকে গত ৬ অক্টোবর ভোরে স্বর্ণা মারা যান। তার শরীরের প্রায় ৫২ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সুজন মিয়া তার স্ত্রীর শরীরে গরম তেল ঢেলে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলেও জানায় সিআইডি।
নদী বন্দর / সিএফ