বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সংস্থাটিকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিএসটিআইকে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে গত দেড় দশকে আঞ্চলিক অফিস সম্প্রসারণ, জনবল বাড়ানো ও ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বাড়ানোসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রয়োজন হলে আলাদা প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে হবে।
রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বিএসটিআই প্রধান কার্যালয়ে বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে–মান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএসটিআই মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা ও এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
এসময় শিল্পমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিল্পায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে দেশে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ সহজতর হবে। দেশে ও বিদেশে ক্রেতার আস্থা অর্জনে বিশ্বমানের শিল্প অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দেশীয় পণ্যের অবাধ প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে কাঁচামাল থেকে শুরু করে ব্যবহারযোগ্য পণ্য (ফিনিশড প্রোডাক্ট) পর্যন্ত সর্বত্র মানের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী।
শিল্পসচিব বলেন, বিএসটিআই আগের থেকে অনেক সুসংগঠিত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক জনবল ও কর্মপরিধি বেড়েছে, যা জনমনে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবমুক্ত হয়ে দায়িত্বপালন করতে হবে। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে দেশীয় পণ্যের প্রসারে আমাদের শিল্প কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে নির্ধারিত মান বজায় রাখতে হবে। করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা আরও সচল ও বেগবান করতে হবে। সবাইকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও সেবার প্রসার বাড়াতে হবে। মান দিবস পালনের মাধ্যমে দেশের উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, বিপণনকারীসহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তা সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে বলে আমি আশা করছি।
বিএসটিআই মহাপরিচালক বলেন, মানসম্পন্ন পণ্য এবং সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে মাঠপর্যায়ে বিএসটিআইয়ের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে ১০টি আঞ্চলিক ও ৪১টি নতুন জেলা কার্যালয় স্থাপন, পণ্য পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানের নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যমান ল্যাবরেটরিগুলোতে নতুন নতুন পণ্য পরীক্ষণ প্যারামিটার সংযুক্তি করা, মানচিহ্ন নকল ও অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে অনলাইন কিউআর কোড সম্বলিত লাইসেন্স দেওয়া, পণ্যের হালাল সনদ দেওয়া, স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাই করে সনদ প্রদান, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তিনি তুলে ধরেন।
এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, স্থানীয় কাউন্সিলর, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর বা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিএসটিআই কাউন্সিল সদস্য, মান প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি, শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেন।
নদী বন্দর / সিএফ