গাজীপুরের কালীগঞ্জে আখ চাষে বাম্পার ফলন এবং ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকদের মুখের হাসি ফুটেছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর ৬০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৬১৪ মেট্রিকটন আখের আবাদ হয়েছে। এ বছর তা বেড়ে ৬২ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৭৩৫ মেট্রিকটন আখের আবাদ হয়েছে।
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কম-বেশি আখের চাষ হয়। তবে বাহাদুরসাদী, জামালপুর, মোক্তারপুর ও কালীগঞ্জ পৌরসভায় একটু বেশি চাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের আখ চাষ হলেও ঈশ্বরদী ১৬ ও ৩৬, টেনাই, বি.এস.আর.আই ৪১ ও ৪২ জাতের আখ বেশি চাষ হচ্ছে। দিন দিন আখ চাষে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে যে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে লক্ষ্যমাত্রা দিন দিন অতিক্রম করবে।
এখন আখের ভরা মৌসুম। গরম কিংবা শীত যে কোনো ঋতুতেই পাওয়া যায় আখ। আর এই আখ বাংলাদেশে চিনি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল। আখের রস হালকা থেকে গাঢ় সবুজ বর্ণের মিষ্টি তরল পানীয়। আখ বা আখের রস হলো প্রাকৃতিক মিনারেল ওয়াটার যা আমাদের শুধু তৃষ্ণা নিবারণ করে না বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা গ্র্রহণ করে। আখ চাষে ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে বাজারজাত করা যায় এবং ফলনও পাওয়া যায় বলে আখ চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বাশাইর গ্রামের আখ চাষি আব্দুর রহমান (৬০) জানান, তিনি গত বছর ১০ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করেছেন ওই পরিমাণ জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছিল ৩৪ হাজার টাকা। তিনি পাইকারি ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এবছর সমপরিমাণ জমিতে আখের চাষ করে ৪৪ হাজার টাকা খরচ করে তিনি ৫৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
একই ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের আরেক আখ চাষি ইসলাম সরকার (৬৮) জানান, তিনি নিজেই সব কাজ করেন। এ জন্য তার খরচ খুব একটা হয় না। তবে ৯ শতাংশ জমিতে তার মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে একই খরচে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করলেও এ বছর ওই জমির ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন বলে জানান।
একই গ্রামের আখ চাষি আব্দুল বাতেন জানান (৬৫) জানান, তিনি মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছেন। গত বছরও তিনি একই পরিমাণ জমিতে আখ চাষ করেছেন। তবে ৩২ হাজার টাকা বিক্রি করলেও এ বছর বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকা।
উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নে দেউলিয়া গ্রামের আখ চাষি আবেদ আলী (৫৫) জানান, এবার প্রথম তিনি ৪ বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছেন। গত বছর প্রতিবেশীকে দেখে আখ চাষে এবার তিনি উদ্বুদ্ধ হন। ফলন এবং ন্যায্য মূল্যে খুশি বলেও জানান ওই আখ চাষি।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ঘোনাপড়া গ্রামের আখ চাষি আক্তার হোসেন (৬০) জানান, প্রতিবেশী দুলাল হোসেন, মাজু মিয়া, পনির হোসেন, আক্রাম হোসেন মিলে স্থানীয় একজনের কাছ থেকে ৪ বিঘা জমি বর্গা হিসেবে নিয়ে তারা ৫ জন মিলে আখের চাষ করেছেন। তবে ফলন এবং ন্যায্য মূল্যে তারা সবাই খুশি।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম জানান, উপজেলার যেসব এলাকায় আখ চাষ বেশি হচ্ছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ওই এলাকার আখ চাষিদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দেওয়াসহ আখ মাড়াই যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আখ লাগানো থেকে শুরু করে উঠানো পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে সার প্রয়োগ ও রোগ বালাই নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।
নদী বন্দর / এমকে