গরু, খাসি ও মুরগির মতো মাংসের বাজারে দখল নিতে পারে উটপাখিও। এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকার সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআইএ)।
প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণার মাধ্যমে বাণিজ্যিক খামারে উটপাখি পালনে সম্ভাবনাময় ও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। এখন মাঠ পর্যায়ে উটপাখি পালন সম্প্রসারণের অপেক্ষা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও হালাল উটপাখির মাংস। এ কারণে আমিষের চাহিদা পূরণে এ পাখি পালন সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান তারা।
ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, বছরখানেক আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিছু উটপাখি আনে বিএলআরআইএ। পরে এখানে প্রাথমিকভাবে পালন শুরু হয়। তারা বলছেন, উটপাখির অবাধ প্রজনন, ডিম ফোটানো থেকে শুরু করে খাবার, লালন-পালন এবং এর মাংসের গুণাগুণ নিয়ে সবই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। পাখিগুলো দেশের বিভিন্ন খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
বিএলআরআইয়ের এ প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, এ পাখির মাংস বেশ সুস্বাদু। স্বাদ অনেকটা মুরগির মাংসের মতোই। তবে মুরগির মাংসের চেয়ে উটপাখির মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কম। তাই এর মাংসের কদরও বেশ।
তিনি বলেন, এতদিন অনেকেই সৌন্দর্যবর্ধন ও শখে উটপাখি পালন করেছেন। তবে অনেকে জানতেনই না যে উটপাখির মাংস শতভাগ হালাল। এর লালন-পালন সহজলভ্য এবং এর মাংসকে জনপ্রিয় করার জন্য আমরা কাজ করছি। গুণাগুণ বিচারে উটপাখির মাংসের তুলনা হয় না।
পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উটপাখি। তবে এরা উড়তে পারে না। এদের উচ্চতা হয় সাত থেকে আট ফুট পর্যন্ত। ওজন ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চতার মতোই বড় উটপাখির ডিমও। একেকটি ডিমের গড় ওজন প্রায় দেড় কেজি।
বছরে একেকটি পাখি ডিম দেয় প্রায় ১০০টির মতো। মরুভূমির এ পাখি তৃণভোজী অর্থাৎ শুধু ঘাস ও লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। ফলে চাষির পকেটের জন্যও হুমকি হবে না এ পাখি।
বিএলআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. আব্দুল জলিল বলেন, বাংলাদেশে উটপাখির মাংসের চাহিদা রয়েছে। একটা সময় মানুষ ব্রয়লার মুরগি খেতে চাইতো না। এখন ব্রয়লার মুরগি দিয়েই আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তেমনিভাবে অদূর ভবিষ্যতে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণে বেশ ভূমিকা রাখবে উটপাখির মাংস।
‘মানুষের খাবারে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি উটপাখির মাংস সুলভ মূল্যে তুলে ধরার জন্য আমাদের গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। খুব শিগগিরই দেশে উটপাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নদী বন্দর / সিএফ