নওগাঁ থেকে রাজধানীর এলজিইডি কার্যালয়ে এসে অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন এরশাদ হোসেন। ১৯৯৬ সাল থেকে এলজিইডি জেলা কার্যালয়ে মাস্টাররোলে কর্মরত তিনি। অনেকের চাকরি স্থায়ী হলেও অপেক্ষায় আছেন এরশাদ।
এরশাদ বলেন, আমাদের কী অপরাধ? ১৯৯৬ সাল থেকে আশায় আশা বসে আছি। আমার অনেক সহকর্মীর চাকরি রাজস্বের আওতায় এসেছে অথচ আমরা বঞ্চিত।
এরশাদের মতো অনেকে রোববার (২৪ অক্টোবর) এলজিইড কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এলজিইডি ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও পরবর্তীতে অনশন ঘর্মঘটে অংশ নেন।
নিয়োগবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাদের দাবি, ‘হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও তিন হাজার ৭৯৬ জন দক্ষ, নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছি। অথচ একই রায়ে তিন হাজার ৭২৮ জনের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হলেও তিন হাজার ৭৯৬ জনের নেওয়া হয়নি। এতে করে আমরা পরিবার নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমাদের চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন। চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
নানা দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন সরকারি চাকরিবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, গাজীপুর, নরসিংদী, সুনামগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী,বরিশাল, বরগুনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বরগুনা থেকে এসেছেন শরিফ আলমগীর। তিনি বরগুনা জেলা এলজিইডি কার্যালয়ে মাস্টাররোলে ২০০৩ সাল থেকে কর্মরত। যে বেতন পান তাতে সংসার চলে না। কোনো উৎসবভাতা পান না। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে কাজ করলেও এই দিনের বেতন মেলে না।
শরিফ আলমগীর বলেন, সবার চাকরিটা সরকারি হলো কিন্তু আমরা বঞ্চিত। আমাদের অপরাধ কী? এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। যা বেতন পাই তা বলার মতো না।’
এলজিইডি কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্প, মাস্টাররোলে কর্মরত হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের রায়প্রাপ্ত সাত হাজার ৫২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ইতিপূর্বে পদ শূন্য সাপেক্ষে কয়েক ধাপে তিন হাজার ৭২৮ জনকে রাজস্বের আওতায় আনা হয়েছে। পদ শূন্য সাপেক্ষে অবশিষ্টদের চাকরি স্থায়ী করা হবে বলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেন। একই মামলার রায়প্রাপ্ত একাংশকে জাতীয়করণ করা হলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন থাকার পর অবশিষ্টদের এখন পর্যন্ত চাকরি সরকারি করা হচ্ছে না। বিগত আট-নয় বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য হলেও রায়প্রাপ্ত অপেক্ষমাণ তিন হাজার ৭৯৮ জনের চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, রায়প্রাপ্ত অপেক্ষামাণ তিন হাজার ৭৯৮ জনকে আত্মীকরণ না করে সম্প্রতি নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণের কথা শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও হিসাব সহকারীদের নিয়োগ দিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা যে পরিমাণ জনবল নিয়োগের সার্কুলার দেয় তার থেকে কয়েকগুণ বেশি নিয়োগ দিয়ে সব পদ পূর্ণ করছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমাদের রায় বাস্তবায়নের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। এহেন পরিস্থিতিতে আমরা নিরুপায় হয়ে চাকরি সরকারিকরণের জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
নদী বন্দর / এমকে