মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অচিরেই এটা বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
রোববার (২৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে ৭৬তম জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি আমার মাতৃভাষায় জাতিসংঘে বক্তব্য রাখবো। তবে সে রেওয়াজ সেদিন ছিল না। বঙ্গবন্ধু যাতে নিজের ভাষায় বক্তব্য দিতে পারেন, তাই তার সম্মানে জাতিসংঘ বিশেষভাবে বাংলায় বক্তব্য রাখার ব্যবস্থা করেছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু পরাশক্তিদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনারা অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। আপনারা পৃথিবীর দারিদ্র বিমোচনে ব্যয় করুন, শিক্ষার জন্য ব্যয় করুন, স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় করুন।
মন্ত্রী বলেন, কয়েকটি দেশের ভেটোর কারণে ৭২ সালে জাতিসংঘ আমাদের সদস্যপদ দিতে পারেনি। যেহেতু পরাশক্তির এখানে বিশেষ ক্ষমতা আছে, তারা যদি ভেটো দেয়, জাতিসংঘের এখানে কিছু করার থাকে না। সেদিন এই চীন বারবার আমাদের আবেদনের বিরুদ্ধে ভেটো দেওয়ার কারণে ৭৪ সাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সেই প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের অনেক ব্যর্থতা ও সফলতা আছে। ব্যর্থতার কথা যদি বলতে চাই, কোনো সিদ্ধান্ত জনসম্পৃক্ততা হলেও সেখানে অনেক পরাশক্তি দেশ রয়েছে, যাদের জন্য জাতিসংঘ অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যেহেতু জাতিসংঘের নিজস্ব কোন বাহিনী নেই, তারা সারা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের পয়সায় চলে, তাদের নিজস্ব এমন কোনো শক্তি নাই যে, কোনো পরাশক্তির অপসিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা সর্বোচ্চ পরামর্শ দিতে পারে এবং মানার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে জাতিসংঘ একটি সফল বিশ্ব সংস্থা। তারা বিভিন্ন কাজে তাদের সফলতা দেখিয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতার সময় জাতিসংঘের প্রথম দিকের ভূমিকাকে আমরা যেমন প্রশংসা করতে পারি না, কিন্তু কিছুদিন পর যখন গণহত্যা প্রকট আকার ধারণ করলো, তখন জাতিসংঘ এগিয়ে এসেছিল। যদিও তা স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নয়, পূর্ব পাকিস্তানের স্মরণার্থী এই ক্যাপশনে তারা এসেছিল, অনেক সাহায্যও করেছিল। তখন যদি জাতিসংঘ এগিয়ে না আসতো, তাহলে অনেক মানুষ না খেয়ে মারা যেতো। বিভিন্ন দেশের ওপর জাতিসংঘের কর্তৃত্ব নেই, তবে তার যতটুকু ক্ষমতা আছে, সেই ক্ষমতা সে প্রয়োগ করে বলেছিল শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য। দেশে তখন যে সমস্যা চলছে, তার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য জাতিসংঘ সেদিন চেষ্টা করেছিল। এরপর যখন যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে, তখন জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, জাতিসংঘের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এজন্য, বঙ্গবন্ধু সমুদ্র সীমার জন্য যে মামলা করে গিয়েছিলেন, সে মামলার রায় দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল। তার রক্তের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সেই মামলা চালু করেন। সমূদ্র আইনের বদৌলতে আমরা বিনা রক্তপাতে মিয়ানমারের কাছ থেকে আমাদের সমূদ্র সীমা ফেরত এনেছি। এটা জাতিসংঘের কারণেই সম্ভব হয়েছে। তা নাহলে আমরা কখনোই সমুদ্রসীমা উদ্ধার করতে পারতাম না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মন্ত্রী বলেন, জাতসংঘের প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, রোহিঙ্গাদেরকেও যেন সসম্মানে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাদের জীবনমান উনয়নের জন্য রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘ বেশ উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু এটা আমাদের কাম্য নয়। আমাদের দাবি, সসম্মানে তাদের মাতৃভুমিতে ফেরত নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমাদের সরকার কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মাত্র ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার মতো ঘটনা আর ঘটেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এতো লোক মারা গেছে। কিন্তু এতো অল্প সময়ে এতো লোক কোথাও মারা যায়নি। তাই ২৫ মার্চ বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছিল, তাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ রাখছি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. আমজাদ হোসেন, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক প্রমুখ।
নদী বন্দর / এমকে