মেহেরপুরের গাংনীর প্রতিটি বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমি সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সেই সঙ্গে সারাবছর সবজি ও ফলের চাহিদা মেটাতে শুরু হয়েছে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ স্থাপনের কার্যক্রম। সুফল পাওয়ায় দিনদিন এর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাগানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রকম সবজি ও ফল গাছ। কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এরই মধ্যে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চাষিরা সুফলও পাচ্ছেন। পুষ্টি বাগান কার্যক্রম বিস্তারে কৃষি অফিস সব সময় কাজে নিয়োজিত।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রায় সব বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির পাশে পতিত জায়গা রয়েছে। যেখানে সব ধরনের সবজি চাষ সম্ভব। এটা ভেবেই পারিবারিক পুষ্টি বাগানের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। গাংনীর তেরাইল গ্রামে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে মহিলা পাঠাগার তৈরি করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
এসব নারীরা নিজ বাড়িতে জৈব নাইট্রোজেন, জৈব বালাই নাশক, টাইকো কমপোস্ট, এক্সক্লুসিভ সুপার কমপোস্ট, বুলেট পাওয়ার কমপোস্ট ইত্যাদি তৈরি ও ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি চাষ করছেন। এরই মধ্যে চাষিরা বেশ সুফল পেতে শুরু করেছে। পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা বাড়ির আঙিনার খালি জায়গা বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ও বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রকার ফল গাছ শোভা পাচ্ছে। ক্ষেতে কাজ করছেন গৃহবধুরা। বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ক্ষেতের কাজে আত্মনিয়োগ করছেন। গল্প করে সময় না কাটিয়ে তারা বাড়তি লাভের আশায় সবজি চাষ ও ফল গাছের পরিচর্যা করছেন।
পরিবারের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণের বেশি লাভের আশায় নিজ উদ্যোগে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ করছেন। বসতবাড়ির আঙিনা, পুকুর ও খালের পাড়, বাড়ির আশপাশ, স্যাঁতস্যাঁতে ছায়াযুক্ত প্রতি ইঞ্চি অব্যবহৃত ও অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি ও ফলমূলের বাগান শোভা পাচ্ছে প্রতিটি বাড়িতে।
গৃহবধু রেহেলা খাতুন জানান, উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. বকুল হোসেনের পরামর্শে বাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরি করেছি। বাড়ির আঙিনা হওয়ায় জমিতে সার, বীজ বপন,পানির সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে ফসল রক্ষণাবেক্ষণের সব কাজ নিজেই করতে পারি। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে নিজেদের পরিবারকে খাওয়াতে পাচ্ছি। অন্যান্য নারীরাও বাড়ির উঠানে অনাবাদি ও পতিত জমিতে সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। একই কথা জানালেন গৃহবধু রেহেনা খাতুন, আসমা বেগম ও শিউলি খাতুন।
কৃষক মজিবর রহমান জানান, আমরা যেমন মাঠে কাজ করি। বাড়ির নারীরা আমাদের সব কাজে সহায়তা করার পর নিজ উদ্যোগে যে সবজি বাগান করছে তা থেকে পারিবারিক সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয় হচ্ছে। অনেকেরই পারিবারিক সচ্ছলতা ফিরে এসেছে পারিবারিক সবজি বাগানের কল্যাণে। এক্ষেত্রে উপসহকারী কৃষি অফিসার বকুল হোসেন বেশ সহযোগীতা ও উদ্যোগ রয়েছে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. বকুল হোসেন জানান, তেরাইল গ্রামে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে মহিলা পাঠাগার তৈরি করে ১৮০ জন নারীকে নিরাপদ সবজি চাষ সম্পর্কে সপ্তাহে দুদিন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারীরা নিজ বাড়িতে জৈব নাইট্রোজেন, জৈব বালাই নাশক, টাইকো কমপোস্ট এক্সক্লুসিভ সুপার কমপোস্ট বুলেট পাওয়ার কমপোস্ট ইত্যাদি তৈরি ও ব্যবহারের মাধ্যমে লাউ, শিম, বরবটি ,পুঁইশাক, লালশাক উৎপাদন করে যাচ্ছে। এ থেকে একদিকে যেমন পারিবারিক পুষ্টির যোগান পাচ্ছে অন্যদিকে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বাড়ির আঙ্গিনায় মাল্টা বাগান ও ছাদে ড্রাগন ফল, অড়বরই, গোলাপ জাম, থাই পেয়ারাসহ অনেক ফলের চাষ হচ্ছে। এখান থেকে বিষমুক্ত ফল পাচ্ছেন প্রতিটি পরিবার। এ ধরণের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, প্রস্তাবিত খামারের মডেল এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে একজন কৃষক সব সময়ই খামার থেকে কিছু না কিছু পাবেনই। কখনো সবজি থাকবে, আবার কখনো থাকবে ফল। এজন্য উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষকরা বেশ সুফল পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এটা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে করছেন নারীরা। এতে পারিবারিক স্বচ্ছলতা আসছে।