ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাস চলানো বন্ধ রাখায় শনিবার সকালে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস না পেয়ে অফিসমুখী অসহায় মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনা চলাচল করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ সুযোগে এসব যানবাহনে নেয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায়ই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান, কাভার্ডভ্যানে চড়েও যাচ্ছেন কর্মস্থল ও গন্তব্যে।
তবে মাঝে মাঝে দেখা মিলছে বিআরটিসির বাসের। বাস আসলেই শত শত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অনেকেই কোনো যানবাহন না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন।
শনিবার (৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে জনজীবনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কায় এ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা।
যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, হাজার হাজার যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো বাস নেই। সিএনজিচালিত অটোরিকশা আসলেই দাম-দর করতে অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন, বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া হাঁকছেন চালকরা।
মালিবাগে একটি অফিসে চাকরি করেন শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অফিস খোলা যেভাবেই হোক অফিসে যেতে হবে। সিএনজি অটোরিকশায় ৫০০ টাকা চাইছে, ভাড়া ২০০ টাকাও না। বাস ধর্মঘট এদের ঈদ নামিয়ে দিয়েছে।’
গুলিস্তানে একটি মার্কেটের বিক্রয়কর্মী মাসুম মিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়াইয়া আছি। বাস ধর্মঘট কিন্তু অফিস-মার্কেট সবই তো খোলা। মানুষের কষ্টের শেষ নাই। ঝুঁকি নিয়া কয়েকবার পিকআপে ওঠার চেষ্টা করছি, পারি নাই। বিআরটিসিতেও উঠতে পারি নাই। মার্কেটে কেমনে যামু জানি না।’
মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাইনুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কেউ চাইলো আর বাস বন্ধ করে বসে থাকল। এটা কোনো কথা? এ দেশে কী সরকার বা কোন নিয়ম-কানুন আছে? থাকলে হয়তো এভাবে অরাজকতা হতো না। এত মানুষের ভোগান্তি কেউ দেখছে না!’
রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে অনেককে অফিসে যেতে দেখা গেছে। অ্যাম্বুলেন্সটি যাত্রীতে ঠাসা ছিল।
রায়েরবাগ ও শনির আখড়া থেকে ভ্যানগাড়িতে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে যাত্রাবাড়ীতে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। অথচ এ দূরত্বে বাসভাড়া মাত্র ৫ টাকা।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে একটি দোতলা বিআরটিসির বাস আসলেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। সবাই বাসের দিকে দৌড় দেন। বাসটি ৩/৪ মিনিট অপেক্ষা করে। এরমধ্যেই বাসটি যতটুকু খালি ছিল তা ভরে যায়। তখনও বাসের দুই দরজায় শত শত মানুষ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেডিকেল, শনির আখড়া, কাজলা যাত্রাবাড়ীতে একই চিত্র দেখা গেছে। এ সব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
নদী বন্দর / জিকে