মেহেরপুরে ফুলকপি ও বাঁধাকপির ক্ষেতে ব্যাপকহারে পোকা আক্রমণ করেছে। কৃষকরা বলছেন, জমিতে কালো মাথার পোকা ছড়িয়ে পড়েছে। এ পোকা কীটনাশক দিয়েও দমন করা যাচ্ছে না। পোকা দমনে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পোকা দমন বা নিধনে কৃষি অফিসের কোনো ধরনের সহায়তাও পাচ্ছেন না বলে কৃষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) জেলা সদরের কুতুবপুর, উজলপুর, শোলমারি ও গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, কাথুলী, ধলা, নওয়াপাড়া, জোড়পুকুর, গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব কপির ক্ষেত পোকায় আক্রমণ করেছে। কালো মাথার পোকার আক্রমণের কারণে অধিকাংশ কপির জমিতে পাতা ফুটো ও হলুদ আকার ধারণ করেছে। এক পর্যায়ে শিকড় পচে গাছ মরে যাচ্ছে।
পোকা দমনে কৃষকেরা বিভিন্ন কোম্পানির ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো ধরনের সুফল পাচ্ছেন না।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের শুকুর আলী বলেন, এবছর তিনি প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। তারসহ গ্রামের অধিকাংশ কৃষকের ফুলকপি ও বাঁধাকপির ক্ষেতে ব্যাপকভাবে কালো মাথা ও উড়া পোকা আক্রমণ করেছে। পোকা দমনের জন্য কৃষক দানাদার ও তরলজাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করছেন, কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এর আক্রমণ। এক বিঘা জমিতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার শুধু কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
একই গ্রামের শমসের আলী প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ বিঘা শুধু কপির চাষ করেন। এবারেও তিনি ৫ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরে আগাম জাতের বাঁধাকপি বিঘা প্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। এবারে মৌসুমের শুরুতে বাঁধাকপির বিঘা প্রতি দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ হাজার। একারণে এলাকায় কপির চাষ অনেকাংশে বেড়েছে। গ্রামের দোকান থেকে শহরের দোকানে পোকা দমনের জন্য উন্নত কীটনাশকের ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কোনোটাই কাজ হচ্ছে না।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান অভিযোগ করেন, তারা কপি নিয়ে চরম বিপদে থাকলেও কৃষি অফিস থেকে কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেননি। একই অভিযোগ করে কৃষক খাইবার আলী বলেন, তাদের গ্রামে ফসলের দেখভালের জন্য যাকে দায়িত্ব দেওয়া আছে, বেশির ভাগ কৃষক তাকে চেনেন না। একারণে পোকা দমনে তারা সুফল পাচ্ছেন না।
সদরের কুতুবপুর গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, তাদের গ্রামের মাঠে বিশেষ করে কপির জমিতে কালো মাথা পোকার আক্রমণ হয়েছে। পোকা দমন করা না গেলে কপির ফলনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বাজারে সব চেয়ে নামিদামি কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকের কপির ক্ষেত পোকার আক্রমণে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, সম্প্রতি ফুলকপি ও বাঁধাকপির জমিতে লেদা পোকার আক্রমণ হয়েছে। অনেকে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশকের বেশিমাত্রার ব্যবহারের কারণে পোকার সহনশীল ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেকারণে কীটনাশক যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। কৃষি কর্মকর্তারা সেই সকল কৃষকদের অন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে আগাম ও মৌসুমী বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ হয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে।
নদী বন্দর / সিএফ