রাজশাহীতে আগের চেয়ে টমেটোর আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। একারণে চলতি মৌসুমের শুরুতেই টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে টমেটোর ব্যাপক উৎপাদন হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানায়, সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টমেটো চাষের মৌসুম ধরা হয়। গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলে আগাম টমেটোর আবাদ হয়।
এছাড়া অনেকেই লেবু, মাল্টা, পেয়ারা ও বড়ই চাষের প্রাথমিক পর্যায়ে টমেটোকে সাথি ফসল হিসেবে আবাদ করায় ফলন বেশি হয়। তবে বর্ষার পরবর্তী সময়ে আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে শুরু হয় টমেটো চাষ।
আবার বেশি ফলনের আশায় এসময় কৃষকরা জমিতে বিপুল প্লাস, ভিএল-৬৪২, সাওসান-৮৩২৩, ইউএল-৭৪২, মহারাজ ও সালামত জাতের উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের টমেটোর আবাদ করেন। যার কারণে আগের চেয়ে চলতি মৌসুমে ফলন বহুগুণে বৃদ্ধির পেয়েছে।
যদিও রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ৩৬ জাতের টমেটোর আবাদ হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে ৫ থেকে ৬ জাতের হাইব্রিড টমেটোর আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। দেশি ৫টি জাতের টমেটো থাকলে এগুলোর তেমন আবাদ নেই বললেই চলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে রাজশাহীতে টমেটোর মোট আবাদ ছিল ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর। গড় ফলন ছিল ২২.৬ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ মেট্রিক টন এবং অর্জন হয়েছে প্রায় সমপরিমাণ। মোট উৎপাদন হয়েছে ৮২ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন।
তবে চলতি অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ হেক্টর। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৭.২৩ হেক্টর হয়েছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে ধারণা করছে কৃষি সম্প্রসারণ কর্তৃপক্ষ।
কারণ এবছর চরাঞ্চল, বাড়ির আঙিনা ও সাথি ফসল হিসেবে টমেটোর চাষ বহুগুণে বেড়েছে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত টমেটো উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। অথচ গত বছর মোট উৎপাদন ছিল সাড়ে ৮৬ হাজার মেট্রিক টন।
রাজশাহীতে ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে টমেটোর চাষাবাদ হয় গোদাগাড়ী, পবা ও বাগমারা উপজেলায়। এসব অঞ্চলে তিনভাগের দুই ভাগের বেশি টমেটো উৎপাদন হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
মূলত এসব অঞ্চলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারিরা এসে জমি ধরে টমেটোর ক্ষেত কিনে নেয়। তারপর ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে রাজশাহী অঞ্চলে টমেটোর চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছে। এর ফলে টমেটোর চাষাবাদেও উৎসাহিত হচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক।
স্থানীয়ভাবে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে টমেটো বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন ছাড়িয়ে যায়। বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়।
কম করে প্রতিমণ ১ হাজার টাকা করে মূল্য নির্ধারণ করলে ৬০ কিংবা ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। যা ধান অথবা অন্য ফসল চাষে সম্ভব নয়। রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয় গোড়াগাড়ী উপজেলায়। এ অঞ্চলে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে।
গোদাগাড়ীর মাটিকাটা গ্রামের টমেটোর চাষি টিপু সুলতান বলেন, ১০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। প্রথমে প্রায় ১৫ মণ টমেটো উঠেছে। প্রতি মণ (কাঁচা) টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকায়। দিন যত যাবে, ততবেশি টমেটো উঠবে। দামও কমবে। প্রথমদিকে ভালোই দাম পাওয়া যায়। কিন্তু পরে দাম কমে যায়। তবে বর্তমানে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
গোদাগাড়ীর আরেক টমেটো চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর আবাদও ভালো, দামও ভালো। শীতের আগে টমেটোর মৌসুম। তাই ঢাকার পাইকারি ক্রেতারা এলাকায় আসে। ঘুরে ঘুরে দেখে টমেটোর বাগান একসঙ্গে কিনে নেয়। ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে চলে যায়। তাই টমেটো চাষে লাভও বেশি, সুবিধাও বেশি।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা জানান, টমেটো উৎপাদন মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এই অঞ্চলে টমেটো দুবারে চাষ হয়। এরই মধ্যে কিছু টমেটো মৌসুমের শুরুতেই উঠে। বাজারে টমেটোর চাহিদা থাকায় এসময় টমেটোর বেশি দাম পান চাষিরা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল বলেন, এক কথায় টমেটো অর্থকরী ফসল। জেলায় সবচেয়ে বেশি গোদাগাড়ী, পবা ও বাগমারাতে টমেটো চাষ হয়। বাজারে চাহিদা বাড়ায় প্রতি বছরই টমেটোর চাষের পরিধি বাড়ছে। ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকরাও আধুনিক চাষের কলাকৌশলের দিকে ঝুঁকছেন। আর তাই ফলনও বাড়ছে।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে ৩৬ জাতের টমেটোর চাষাবাদ হলেও ৪ থেকে ৫ ধরনের উচ্চ ফলনশীল টমেটোর চাষাবাদ বেশি। প্রথমদিকে বাজারে অগাস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে টমেটোর বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে।
নভেম্বর থেকে বতর্মানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে বরি মৌসুমের শেষে অর্থাৎ মার্চ দিকে এই টমেটোই বিক্রি হবে ৫০ থেকে সর্বনিম্ন ১০ থেকে ১৫ টাকায়। অন্যদিকে ১০ থেকে ১৫ টাকা মৌসুমের শেষ সময়ের দাম হয়ে থাকে।
নদী বন্দর / সিএফ