শীতকালীন সবজি হিসেবে সবার কাছে শিম বেশ জনপ্রিয় একটি সবজি। শীত মৌসুম শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে এর দাম বেশি থাকে। এই অসময়েও বেশি দামে শিম বিক্রির আশায় মেহেরপুরের চাষিরা শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় চলতি মৌসুমে শিম বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। জেলায় এবছর ৫৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ৩ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ৫৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩০০ হেক্টর এবং মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের বারাদি, পাটকেলপোত, কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, পিরোজপুর, টুঙ্গি ও গহরপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ শিম চাষ হয়েছে। মাঠের পর মাঠ শিম ফুলে ভরে উঠেছে। চাষি শিমক্ষেতে সেচ ও কীটনাশক দিচ্ছেন। কেউ করছেন শিম গাছের পরিচর্যা। আবার কেউ বা তুলছেন শিম।
সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কাঁঠালপোতা গ্রামের মাঠে প্রায় ৮০০ বিঘা ও টুঙ্গি গ্রামের মাঠে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে শিম চাষ হয়েছে। এছাড়া মুজিবনগর গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণে শিম চাষ হয়েছে।
মেহেরপুর সদরের কাঁঠাল পোতা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুম শুরুর আগেই ক্ষেত প্রস্তুত করে বপন করেন শিমের বীজ। পুরো শীতে শিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হন। শীতের পাশাপাশি গরমেও এ সবজি চাষ হচ্ছে।
নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। শিমে অন্যান্য সবজির মতো ভাইরাস নেই বললেই চলে। সব ধরনের মাটিতেই শিমের চাষ হয়। বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা কিংবা পুকুর পাড় এমনকি জমির আইলে এসবজি চাষ করা যায়। বাজারে শিমের চাহিদা ভালো, দামও বেশি, তাই গ্রীষ্মেও শিম চাষে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
সদর উপজেলা কাঁঠালপোতা গ্রামের আরেক শিমচাষি নোমান আলী বলেন, দীর্ঘ দশ বছরেরও বেশি আমি শিম চাষ করছি। এপর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
একই গ্রামের আরেক শিম চাষি সুরমান হোসেন বলেন, এবার আমি দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। প্রতি সপ্তাহে আমার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার কীটনাশক লাগে। সার, কীটনাশকের দাম বেশি হলেও উৎপাদন খরচ উঠে যাবে বলে জানান তিনি।
টুঙ্গী গ্রামের শিম চাষি মোহন আলী ও সাকিরুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে শিম চাষ করি। তারপরও আমার ভালো লাভ হয়। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায় শিম চাষ করে। আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণে শিম চাষ করার ইচ্ছা আছে।
শিম ব্যবসায়ী আব্দুল সালাম বলেন, প্রায় এক যুগ কৃষকের সাথে মাঠ থেকে শিম কিনে দেশের বিভিন্ন জেলাতে বিক্রি করি। ক্ষেত থেকে চাষিরা শিম বিক্রয় করে লাভবান হয় সেই সাথে আমরাও লাভ হয়।
শিম ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, অনেকদিন ধরে আমি শিম ও সবজির ব্যবসায় করি। চাষিরা শহরে শিম নিয়ে গেলে কেজি প্রতি ৩ টাকা করে খরচ হয়। সেই জন্য চাষিরা ক্ষেত থেকে আমাদের কাছে শিম বিক্রি করেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন পারভীন জানান, এই মৌসুমে শিমের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় শিম চাষে চাষি বেশি লাভবান হবেন। অল্প জমিতে স্বল্প পুঁজি দিয়েই চাষ করা হয় শিম। এতে বেশ লাভ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই প্রতিবছর চাষিরা শিম চাষ করেন। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরের মাটি সবজি চাষের জন্য অনেক ভালো। এবছর মেহেরপুর ৩ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ৫৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শিমের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষক ভালো দাম পাচ্ছেন। কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতার জন্য কৃষি বিভাগ সবসময় পাশে রয়েছে।
নদী বন্দর / বিএফ