৫০ বছরে বিভিন্ন নদীতে ২ হাজার ৫৭২টি নৌ দুর্ঘটনায় ২০ হাজার ৫০৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। অস্থাবর সম্পদ ধ্বংস হয়েছে ৩ হাজার ৪১৭ কোটি ২০ লাখ টাকার।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের ৮০ ভাগ লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে ত্রুটিপূর্ণ নকশার নৌযান ও অদক্ষ চালকের কারণে। এ পর্যন্ত দেশে ৫৬৫টি বড় ধরনের নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে যেখানে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজারের উপরে।
এসব দুর্ঘটনার পর সরকার দুর্ঘটনা এড়াতে এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং কমিটিগুলো দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে কিছু পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। ৫৬৫টি নৌ দুর্ঘটনার বিপরীতে ৮৬৩টি তদন্ত কমিটি সুপারিশ প্রণয়ন করে প্রতিবেদন জমা দিলেও সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। আবার এগুলোর কোনো সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে পবাসহ ১৫টি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘নিরাপদ নৌ-চলাচলের জন্য নৌ-অগ্নিকাণ্ডে মালিকসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নৌযান মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় নিশ্চিত কর’ শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
নিরাপদ নৌ পথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুর রসুলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো.আবদুস সোবহান, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষাকারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিশ কুমার দে, মানবাধিকার সংরক্ষণ ফোরামের মহাসচিব মাহবুল হক, মৃত্তিকার সভাপতি খাদিজা খানম, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, এটা ভালো উদ্যোগ। আমরা চাই দুঘর্টনায় প্রাণ হারানো এবং আহত ব্যক্তির প্রত্যেক পরিবারকে লঞ্চ মালিকসহ দায়ীদের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদান করার এবং সারাজীবন চলার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করার দাবি জানায়। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় পবা’র নেতৃত্বে একটি বেসরকারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য তুলনামুলক সহজ ও ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে মানুষ নৌপথকে গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। নৌপথের গুরুত্ব বিবেচনা করে অন্যান্য দেশ যাতায়াত ব্যবস্থাকে আধুনিক ও নিরাপদ করলেও আমাদের দেশে নৌপথের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। আমাদের বিভিন্ন নৌরুটে অসংখ্য যাত্রী ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত করছে এবং প্রায় দুঘর্টনায় শিকার হচ্ছে। বারবার আমাদের দেশের নৌ পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। অহরহ নৌপথে দুঘর্টনা ঘটছে এবং ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। শতশত প্রাণ হারালেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। অনিয়ম ও দুর্নীতি বিরাজ করছে নৌ পরিবহন ব্যবস্থাপনায়।
নদী বন্দর / জিকে