যশোরের শার্শা উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৬০ হেক্টরের বেশি জমির পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। শ্রমিক সংকট আর ঝড়বৃষ্টিতে জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। এদিকে কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর শ্রমিকদের মজুরিও অনেক বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোরের শার্শাসহ বেশির ভাগ উপজেলায় ধান কাটা কাজে যোগ দেওয়া শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগই আসেন সাতক্ষীরা এবং ঠাকুরগাঁও থেকে।
তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সেই সংখ্যা খুবই কম।
ধান কাটা শ্রমিকরা বলছেন, শুকনো জমির চাইতে জলাবদ্ধ জমির ধান কাটতে সময় বেশি লাগে, ফলে দিন শেষে কাজ করে পোষাতে পারেন না। যে কারণে শ্রমের মূল্য বেশি দিতে হয়। এ ছাড়া জলাবদ্ধ জমিতে কাজ করতে কষ্ট বেশি। অন্যদিকে ধান কাটা এসব শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষকদের মাঝে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে আসা একটি ১৩ জনের দলের সর্দার দিন ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় এক বিঘা জমির ধান কাটতাম। এতে তেমন কষ্ট ছিল না। কিন্তু এ বছরে অধিকাংশ জমির ধান বৃষ্টি ও ঝড়ে মাটিতে পড়ে গেছে, যা কাটতে এবং গোছাতে অনেক কষ্ট হয়। এ জন্য এ বছর বাড়তি করে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ) প্রায় সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দুই শ্রমিক হিসেবে ধান কাটার ধারণা করে চুক্তি নিলেও সেখানে তিনজন শ্রমিক লাগছে। ধান জমিতে পড়ে যাওয়ায় শ্রমিক বেশি লাগছে। ‘
এদিকে কয়েকজন জমির মালিক জানান, শ্রমিক সংকটে পরিবারের সদস্যরা মিলে নিজেরাই নিজেই ধান কাটছি। দ্রুত ধান ঘরে তুলতে না পারলে জমিতে চারা গজাচ্ছে। একদিকে ধান নষ্ট, অন্যদিকে খড়ও নষ্ট হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে তিন থেকে চার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। যেখানে প্রতি বিঘাতে ধান হয় ২৫ থেকে ২৬ মণ, সেখানে জমির ধান ঝড়বৃষ্টিতে পড়ে গিয়ে ধান হচ্ছে ১৮ থেকে ২২ মণ। ফলন ঠিকই হয়েছিল; কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে পড়ে গিয়ে জমিতে ধান নষ্ট হয়েছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাপ মন্ডল বলেন, চলতি মৌসুমে এবার উপজেলায় ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৩ হাজার ৬০০ হেক্টর, সেখানে প্রায় ৬০ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একদিকে শ্রমিক সংকট অন্যদিকে টানা ঝড়বৃষ্টিতে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। তার পরও চেষ্টা করতে হবে দ্রুত জমির ধান বাড়িতে নিয়ে আসার।
নদী বন্দর/আরএম