ঘূর্ণিঝড় অশনি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এটি আরও দুর্বল হয়ে একটি দুর্বল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ভারতের ওড়িশা উপকূল থেকে এসে দীঘা হয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি থাকতে পারে আজ ভোর পর্যন্ত। তবে কোথাও কোথাও টানা বৃষ্টি নাও হতে পারে। থেমে থেমে হালকা, মাঝারি বা ভারি বৃষ্টি হতে থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দফতর জানায়, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি সে দেশের বিশাখাপত্যনম থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এ ছাড়া গোপালপুর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে এবং পুরী থেকে ৪৭৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থান ঘূর্ণিঝড়ের। ধীরে ধীরে আশনির দাপট কমতে থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘলা। দুপুরে কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হয়। দুপুরের পর আকাশে মেঘ বাড়তে থাকে। বিকেল নাগাদ নামে মুষল ধারায় বৃষ্টি। ভারি বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে রাজধানীর নিচু গলিগুলোতে পানি জমে গেছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও মাঝারি আবার কোথাও ভারি। এই বৃষ্টি ভোর পর্যন্ত থাকতে পারে বিভিন্ন এলাকায়। তবে সন্ধ্যার পর কিছু এলাকায় কমে আসতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হওয়া একদিক দিয়ে ভাল। এতে ঝড়ের শক্তি কমে যায়।’
বাংলাদেশের আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে দুর্বল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
নদী বন্দর/এসএম