মধুমতি নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর ভাঙনে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৩০০ ঘর হুমকির মুখে পড়েছে। গত ৩ বছরে এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৬০০ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। বর্তমানে সেখানকার ১ হাজারের মতো পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে।
নদী তীর রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে এসব ঘর দ্রুতই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বসতিরা। এ অবস্থায় নদী তীর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সেখানকার বসতিরা মাবনববন্ধন করেছেন।
জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের ছাতিয়াগাতি, দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, কাতলাসুর ও পগনবেগ এই পাঁচ গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙনের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া আশপাশের বাজড়া, বাঁশতলা, দক্ষিণ চর নারানদিয়া, পশ্চিম চর নারাণদিয়া ও পাড়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাচুরিয়া, টগরবন্দ ও বানা ইউনিয়নেও মধুমতি নদীর ভঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুল ঘর, মসজিদসহ নানা ধরনের স্থাপনা।
গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলারসুর গ্রামে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা হয়েছে স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৮৬ জন বসতির নিকট জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। মাত্র দুই বছর না যেতেই এসব ঘরের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙনে ঘর হারানো আশঙ্কায়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রুপালি বেগম জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তারা মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে একটু আশ্রয় পেয়েছিলেন। এখন এই আশ্রয় হারালে তাদের আবার পথে প্রান্তরে থাকতে হবে।
নবিরন বেগম নামে এক নারী বলেন, এই ঘর হারাইলি আমরা হাবিডুবি খাবানি। আমাগে গাঙটা এট্টু বাইন্ধ্যা দ্যান। ছাতিয়াগাতি গ্রামের বিদেশফেরত প্রবাসী শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া বলেন, পৈত্রিকসূত্রে তাদের প্রায় ৩০ একরের মতো জমিজমা ছিল মধুমতির তীরে। শুধু ভিটেটুকু বাদে এখন প্রায় সবই শেষ হয়ে গেছে।
ছাতিয়াগাতি গ্রামের অপর প্রবাস ফেরত শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া বলেন, বছরের পর বছর তার গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। তাদের প্রায় ৩০ একর জমি নদীতে চলে গেছে। এখন ভিটেটুকু রয়েছে। তাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাপদাদার কবর ও মসজিদটাও নদীতে তলিয়ে যাবে যদি ভাঙনরোধ করা না যায়।
বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, একটি পুরনো মসজিদ ছিল যা নদীতে চলে যাওয়ার পরে নতুনস্থানে মসজিদ করা হয়। সেটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মধুমতির ভাঙনে বাজড়া গ্রামের পুরনো একটি মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে। পুরনো মসজিদটির পর নতুন স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। সেটিও এখন ভাঙনের সম্মুখীন। তারা জানান, গোপালপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিল খোলাবাড়িয়া। ভোটার ছিল প্রায় ২৬০০। এখন পুরো গ্রাম মধুমতি নদীর গর্ভে চলে গেছে। তারা এখন আলফাডাঙ্গার নতুন নতুন গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার জেলার বিভিন্ন সভায় বলা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল এবং ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার একাধিকবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
তিনি বলেন, এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আরো প্রায় হাজারখানেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটি আশা করছি।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, বিষয়টি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। স্থানীয় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ যাতে অন্যান্য ক্ষতি না হয় সেজন্য আবারো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বের সাথে বিষয়টি জানানো হবে।
নদী বন্দর/এসএফ