কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন স্থানে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় যমুনা নদীর পানি ছয় সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতে নদী-তীরবর্তী কাজীপুর, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালীতে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। কিছু স্থানে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাঙন রোধে ৩০ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম): রৌমারী উপজেলায় টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় ৪০০ হেক্টর পাকা বোরো ধানখেত প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আকস্মিক এ ঢলে নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। কুটিরচর গ্রামের মাসুদ রান, আজাহার আলী ও হাফিজুর শেখ বলেন, ‘আমাগো পাকা ধানখেত বৃষ্টির পানিতে তলাইয়া (ডুবে) যাচ্ছে, ধান কাটার কামলা (শ্রমিক) পাওয়া যায় না, কামলারা দাম চাইচ্ছে ১০০০-১৫০০ টাকা।
আমরা গরিব কৃষক এত টাকা পামু কনে।’ এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইছুম চৌধুরী বলেন, টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ৩৫০-৪০০ হেক্টর পাকা ধানখেত প্লাবিত হয়েছে। কৃষকদের আমরা ৭৫-৮০ ভাগ পাকা ধান কেটে ফেলতে পরামার্শ দিচ্ছি।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল): ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি। এতে রোপণ করা বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছে কৃষকরা। নদীতে অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধির কারণে নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী মানুষ।
গাবসারা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, অপরিপক্ব ফসল কেটে কোনো লাভ নেই বরং কাটতে গেলে শ্রমিক খরচ হয়। তাই পানিতে পচে নষ্ট হচ্ছে বাদাম, রাঁধুনি সজ, তিল, কাউন ফসলের। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমাছুন কবির বলেন, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের নিচু এলাকার কিছু অংশের ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।
ডোমার (নীলফামারী): গত এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হওয়ায় ধান কাটাইমাড়াই ও শুকানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। চিকনমাটি এলাকার কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কাটাইমাড়াই শেষে এখন ধান শুকাচ্ছি। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে চলা ঝড়বৃষ্টিতে ধান শুকাতে পারছি না। ভেজা ধানে গাজা (চারা) বের হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনিছুজ্জামান জানান, বৃষ্টির কারণে ধান কাটাইমাড়াই ও শুকাতে কৃষকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
নদী বন্দর/এসএফ