২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন বাজেটে খাতটিতে গতবারের চেয়েও এক হাজার ৪১৮ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বরাদ্দ রাখার কথা ঘোষণা করেন।
অর্থমন্ত্রী বক্তৃতায় বলেন, বিগত ১৩ বছর ধরে বিদ্যুৎ উতপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে দেশে সম্প্রতি মোট বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে উত্পাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুত ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। জমির প্রাপ্যতা, জ্বালানি পরিবহন সুবিধা এবং লোড সেন্টার বিবেচনায় পায়রা, মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকাকে পাওয়ার হাব হিসেবে চিহ্নিত করে বৃহৎ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তার মধ্যে কয়লাভিত্তিক পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল বিদ্যুতকন্দ্রের নির্মাণ শেষে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যিক উত্পাদন উদ্বোধন করেছেন।
এ ছাড়া, কয়লাভিত্তিক রামপাল এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রজেক্ট, মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিকাল কোল প্রজেক্ট স্থাপনের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
পাশাপাশি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে প্রায় ৭৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন হচ্ছে। মোট চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উত্পাদনের লক্ষ্যে সৌর শক্তিভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি।
নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ তিন লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
নদী বন্দর/এসএন