যমুনার পানি বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের ব্রাক্ষ্মনগ্রামের ১৮টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। ভাঙ্গনের বিস্তৃতি ঠেকাতে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই এলাকায় চলমান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের ধীরগতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির ফলেই ভাঙ্গন বাড়ছে। স্বচ্ছতার জন্য প্রকল্প তদারকিতে সেনা মোতায়েনের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১০ বছর ধরে বিপর্যস্ত চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থেকে দক্ষিণে শাহজাদপুরের মোনাকষা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর পশ্চিম তীর ব্যাপক ভাঙ্গন ঠেকাতে সরকার ৫৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। যা ১৯টি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রকল্পের প্রথম দফায় বালু ভরে জিও ব্যাগ ফেলা হয় চলতি মৌসুমে।
স্থানীয়দের অভিযোগ- কাজে অনিয়ম, দুর্নীতির পাশাপাশি মূল ঠিকাদাররা কাজ না করে স্থানীয় অদক্ষ প্রভাবশালীদের সাব-ঠিকাদারের কাজ দেওয়ায় এই ভাঙ্গন। তাদের দাবী, প্রকল্প স্বচ্ছতায় বাস্তবায়নে এলাকার সাব-ঠিকাদার বাদ দিয়ে মূল ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাতে হবে এবং এর তদারকিতে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ দিতে হবে।
খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের দক্ষিণ এলাকার প্রকল্পের ৪ নম্বর এলাকার ব্রাক্ষ্মণগ্রামে বিলীন হয় ২৫-৩০টি ঘরবাড়ি। ক্যাবল অপারেটর শ্রমিক হজরত আলীর শেষ সম্বল ঘরটিও রক্ষা করতে পারেনি। বাকিরা কোন রকমে টিনের চালা সরাতে সক্ষম হলেও তাদের অবস্থান এখন খোলা আকাশের নিচে। এ অবস্থায় এলাকা জুড়ে হাহাকার চলছে।
নদীতে বিলীন ঘরবাড়িগুলোর মালিকরা হলো- হজরত আলী, মোহন মেম্বর, নুর হোসেন, মাসুদ রানা, আব্দুল মিয়া, নুরুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, আব্দুস শহিদ, শাহজাহান শেখ, আবুল কালাম, মসজিদের ইমাম মাওঃ বদের উদ্দিন সহ অন্যরা।
এ ব্যাপারে এলাকার আব্দুস শহিদ, শাহজাহান শেখ, আবুল কালাম বলেন, ‘সময় মত কাজ না করা ও মূল ঠিকাদার কাজ না করার কারণেই কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি। এ কারণেই আমাদের এলাকা তছনছ হয়ে গেল। আমরা আজ নিঃশেষ হয়ে গেলাম। এখনো যদি সঠিকভাবে কাজ না হয় তাহলে পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হবে।’
এদিকে ভাঙ্গন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতেও ঠিকাদারের লোকজন ভাঙ্গন কবলিতদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্রাক্ষ্মণগ্রামের বারণ আলী ও আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে নদীতীরে প্রকল্পের কাজের জিও ব্যাগ ফেলেনি ঠিকাদারের লোকজন। এ কারণে ভাঙ্গন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলতে বলছিলাম। তারা বলেছিল আমাদের কাজ ৩ বছর চলবে। এখন ফেলবো না। আর যদি ফেলতে হয় তাহলে আপনাদের ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে আমরা দু’জন সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়েছি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রকল্পের ৪ নম্বর এলাকার ঠিকাদার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার নাম করে ব্রাক্ষ্মণগ্রামে টাকা নেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ক্ষতিয়ে দেখবো।’
সাব-ঠিকাদার সম্পর্কে এ ঠিকাদার বলেন, ‘যারা লোকাল সাব-ঠিকাদার কাজ নিয়েছে, তারা আসলে ঠিকমত কাজ করছে না। তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ব্রাক্ষ্মণগ্রামের ইউপি সদস্য বাচ্চু সরকার বলেন, ‘নদী ভাঙ্গনের ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। কাজ না এগুনোর কারণেই এই অবস্থা। সরকারের কাছে দাবী এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, হাসপাতাল সহ তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এলাকা রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙ্গন রোধে আমাদের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমানে যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তা রোধে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
নদী বন্দর/এসএফ