ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় নিহত এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের নাবিক মোহাম্মাদ হাদিসুর রহমানের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকেলে রাজধানীর বিএসসি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে হাদিসুরের পরিবারের হাতে চেক হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি এমভি বাংলার সমৃদ্ধির অন্য ২৮ কর্মকর্তা ও নাবিককেও তাদের র্যাঙ্ক অনুযায়ী সাত মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে। হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠো ফোনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রিন্স বলেন, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বিএসসি টাওয়ারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রত্যেককে চেক প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
হাদিসুরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ‘আগে থেকেই সংবাদ দিয়ে পরিবারের সবাইকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএসসি টাওয়ারে থাকার নির্দেশ দেন। এজন্য গত দুইদিন আগ থেকেই ঢাকায় হাদিসুরের খালার বাসায় অবস্থান নিয়েছি। ’
জানা গেছে, গত ২০ মে মেরিনারদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (আইটিএফ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) প্রায় সোয়া ১০ লাখ টাকার অর্থসহায়তা প্রদান করে হাদিসুরের পরিবারকে।
বিএমএমওএ সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত থার্ড ক্যাপ্টেন হাদিসুরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলারের (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি) চেক দেবে বিএসসি। তাছাড়া জাহাজটির অন্য কর্মকর্তা ও নাবিকদের তাদের স্ব স্ব র্যাঙ্ক অনুযায়ী সাত মাসের সমপরিমাণ বেতনের চেক দেয়া হবে।
জানা গেছে, বিএসসির মালিকানাধীন জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ডেনিশ কোম্পানি ডেল্টা করপোরেশনের অধীনে ভাড়ায় চলছিল। মুম্বাই থেকে তুরস্ক হয়ে জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে যায়। সেখান থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে ২৯ জন ক্রু নিয়ে অলভিয়া বন্দরে আটকা পড়ে জাহাজটি।
গত ২ মার্চ রকেট হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। তবে অন্য ২৮ জনকে অক্ষত অবস্থায় জাহাজটি থেকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় সরিয়ে নেওয়া হয়। ৫ মার্চ হাদিসুরের মরদেহ ও বেঁচে যাওয়া ২৮ নাবিককে অলভিয়া বন্দর সংলগ্ন বাংকার (শেল্টার হাউজ) থেকে মালদোভা হয়ে রোমানিয়া নেওয়া হয়।
এরপর ৯ মার্চ ২৮ নাবিক রোমানিয়ার বুখারেস্ট বিমানবন্দর থেকে তার্কিশ এয়ারের একটি ফ্লাইটে ইস্তাম্বুল হয়ে ঢাকায় ফেরেন। ১৪ মার্চ রাত ৯ টা ৪০ মিনিটে হাদিসুর রহমানের মরদেহ বরগুনার বেতাগীর কদমতলা গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এবং ১৫ মার্চ সকাল ১০ টায় জানাজা শেষে হাদিসুরের দাদা দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়।
নদী বন্দর/বিএস