অতিমাত্রায় উঁচু অঞ্চল থেকে পানি প্রবাহিত এবং অনেক বেশি বৃষ্টি হলে ঢাকাও প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
রোববার (১৯ জুন) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তৃতীয় বৈঠক।
তাজুল ইসলাম বলেন, বন্যা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তার কোনো পূর্বাভাস কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। যারা পূর্বাভাস দেয়, তারা বলেছে, একটা আগাম সতর্কতা আছে। তবে সেটা কোন পর্যায়ে যাবে, তা বলা হয়নি। অতিমাত্রায় উঁচু অঞ্চল থেকে পানি প্রবাহিত এবং অনেক বেশি বৃষ্টি হলে ঢাকাও প্লাবিত হয়ে যেতে পারে।’
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে সবাইকে মোবাইলে থেকে দেখিয়েছি, সিঙ্গাপুরে কীভাবে পুরো প্লাবিত হয়েছে। সেখানে গাড়িগুলো নৌকার মতো ভাসছিল। এরকম পরিস্থিতি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। নিউইয়র্কে দেখেছি, সাবওয়েতে পানি ঢুকে গেছে। নিউইয়র্কও কিন্তু প্লাবিত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিষয়ে তো কেউই প্রস্তুত থাকে না। তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’
জলাবদ্ধতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিম্নাঞ্চলটা দ্রুত প্লাবিত হয়। আমরা এখনো সব কাজ করে ফেলতে পেরেছি, তা নয়। কিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলমান আছে। সিটি করপোরেশনে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলো বেশিরভাগই নিম্নাঞ্চলে। সেখানে অবকাঠামোগত সমস্যা আছে, যা নিরসনে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দিয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে, শেষ হলে সেখানকার অনেক উন্নতি হবে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মাঝে-মধ্যে আমরা কখনো কখনো দুর্যোগ মোকাবেলা করি। এবারও আমাদের কিছু কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে। প্লাবিত হওয়ার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ন্য প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক সব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকায় মানুষের পাশে সর্বাত্মকভাবে দাঁড়িয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকায় যতগুলো খাল আছে, সেগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি। অনেকগুলো হস্তান্তর করাও হয়েছে। যার সুফল আমরা এরই মধ্যে ভোগ করছি। যদিও এসব খালের অনেক অংশ অনেকে দখল করে নিয়েছেন, যা দখলমুক্ত করা অনেক কঠিন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সুফলের নমুনাও আমরা দেখছি। আমি যখন শুরুতে মন্ত্রণালয়ে আসছিলাম, তখন জলাবদ্ধতার জন্য গাড়ি আসছিল না, আটকে গিয়েছিল। এখানে এত পরিমাণ পানি জমা হয়ে গিয়েছিল। তেজগাঁও, শান্তিনগরসহ অনেক এলাকায় পানি জমে যেতো। খাল হস্তান্তরের ফলে কিছুটা সুফল আমরা ভোগ করছি। সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনাসহ যেসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা হয়েছে, সেগুলো বৃষ্টির পানির পাশাপাশি উঁচু অঞ্চলের পানির প্রভাব আছে।’
বন্যায় ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা আছে, এক্ষেত্রে সরকারের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘১০০ অথবা ১১০ বছরে হয়তো এমন দুর্যোগ আসে। এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন সময় এমন দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে। দুর্যোগের জন্য সবসময় আমাদের প্রস্তুতি থাকে। মন্ত্রণালয় থেকে বন্যা মোকাবিলায় যুগ্মসচিব জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। পরে প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।’
সড়ক কেটে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি যাতে সরে যেতে পারে, এজন্য কয়েকটি রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। কিছু রাস্তা কাটার প্রয়োজন পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। এতে পানি সহজে নেমে যাচ্ছে। দেশের কোথাও প্রয়োজন হলে আরও রাস্তা কেটে ফেলা হবে।’
এ পর্যন্ত কয়টি খাল উদ্ধার করা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে ২৬টি খাল হস্তান্তর করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সাড়ে ছয় একর জমি দখলমুক্ত করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশন ২৫ একর দখলমুক্ত করেছেন। এ কাজগুলো চলমান আছেন।’
১৯৮৮ সালের মতো রাজধানীতে বন্যা হতে পারে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ সালের আমরা বন্যা মোকাবিলা করেছি। আগেও বহুবার মোকাবিলা করেছি। ১৯৯৮ সালে বলা হয়েছিল দুই কোটি মানুষ মারা যাবে। কিন্তু একজনও মারা যায়নি। সেসময় মানুষ না খেয়েও মারা যায়নি। যেখানে যা করা দরকার সেটি করা হচ্ছে। তবে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অপ্রস্তুত থাকা উচিত না। সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি।’
নদী বন্দর/এসএফ