বিদেশে পাচার করা টাকা সাত শতাংশ কর দিয়ে ফিরিয়ে আনার সুবিধা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে নৈতিকতার প্রশ্ন থাকলেও আইনে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এই সিদ্ধান্ত মন্দের ভালো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শুক্রবার (১ জুলাই) এফডিসি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক’ শীর্ষক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চুরি করা টাকা ফেরানোর জন্য পাচার করেননি পাচারকারীরা। এই (ফিরিয়ে আনার) সিদ্ধান্ত মন্দের ভালো। যদি কিছু আসে তাই লাভ। এতে বড় ধরনের লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না। হয়তো কেউ যদি ১০০ টাকা পাচার করে ১০ টাকাও ফেরত নিয়ে আসেন তাতেও লাভ।
তিনি বলেন, সব কথার একটাই কথা আমরা বাংলাদেশি। বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে অবৈধ উপায়ে বেগমপাড়া কিংবা বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে থেকে কী লাভ! বাংলাদেশে থাকার মধ্যে যে শান্তি পৃথিবীর অন্য কোথাও তা নেই বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
এম এ মান্নান বলেন, দাতা সংস্থা বা দাতা দেশ বলতে কিছু নেই। এখন আর আমরা দান-খয়রাত গ্রহণ করি না। আমরা ঋণ নেই। এটা আমাদেরই টাকা। অনেকে বিপদে সহযোগিতা করেন, সেটা বন্ধুত্বের খাতিরে করে থাকেন। আমরাও অনেক সময় অনেক দেশকে অনুদান দেই।
শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বৃষ্টি কিংবা ঝড় হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিষয়টি থেকে আমরা পরিত্রাণের চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে আমরা যাতে এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আমাদের অনেক বড় অর্জন আছে, লজ্জাও আছে উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, শিক্ষক হত্যা, শিক্ষককে জুতার মালা পরানো- এটা অনেক বড় লজ্জা। ঢাকায় দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী লাঠি নিয়ে, অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এক গ্রুপকে আরেক গ্রুপ ধাওয়া করে, সেটা কোনো দেশে নেই। পাকিস্তানেও এই চিত্র দেখা যায় না। আমাদের এখানে বাল্যবিয়ে হয়। এসব বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এবারের বাজেটকে করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য খুব বেশি সুখবর নেই এই বাজেটে। ব্যক্তি করে নেই কোনো ছাড়, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জন্য তেমন কোন কর্মসূচি নেই। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বর্ধিত ভাতার পরিমাণ যৎসামান্য। স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে বরাদ্দ খুবই কম, নেই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুস্পষ্টতা।
তিনি বলেন, অন্যদিকে, বাজেটে প্রতি বছর ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। ঘাটতি বাজেট পূরণে সরকার দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সরকার এবার বৈদেশিক উৎস থেকে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছে।
অথচ দুই বছর আগেও বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি ঋণ বৃদ্ধির এই চিত্র আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যদিকে সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে ঘাটতি বাজেট পূরণ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
ছায়া সংসদ প্রতিযোগিতায় সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। ছায়া সংসদে বিজয়ী হয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ, আরিফুর রহমান ও কাবেরী মৈত্রেয়।
নদী বন্দর/এসএফ