ইলিশ ধরতে জীবনের ঝুঁকি ও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সাগরে ছুটছেন বাগেরহাটের জেলেরা। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার (২৩ জুলাই) ভোর থেকে সাগরে রওনা শুরু করেছেন জেলেরা।
বাগেরহাট শহরের কেবি বাজার, কচুয়ার বগা, শরণখোলার রায়েন্দা, রামপাল ও মোংলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩২ ট্রলারযোগে জেলেরা রওনা দিয়েছেন। সরকারি হিসাবে অন্তত ১৩ হাজার জেলে বাগেরহাট জেলা থেকে মৎস্য আহরণে সাগরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে সাগরে যাওয়া জেলেদের জীবনের ঝুঁকিসহ রয়েছে নানা শঙ্কা।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা এলাকার জেলে রহিম উদ্দিন বলেন, বাপ-দাদার পেশা হিসেবে সমুদ্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। এবছরও যাচ্ছি। এভাবেই জীবন কেটে যায় আমাদের।
একই এলাকার জেলে ওসমান শিকদার বলেন, অবরোধের কারণে ৬৫ দিন সাগরে যেতে পারিনি। অবরোধ শেষ হয়েছে, এখন যাচ্ছি। আশা করি এবার মাছ ভাল পাব।
রামপাল উপজেলার হুড়কা এলাকার ছগির উদ্দিন বলেন, অবরোধের সময় খুব কষ্টে দিন কাটে আমাদের। ধারদেনা করে পেট চালাতে হয়। এর পাশাপাশি অবরোধের সময় জালসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রস্তুতের জন্যও টাকা ধার করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে লোকালয়ে এনে বিক্রি করতে হয় কম দামে।
শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী এলাকার রশীদ মোল্লা বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগের সাথে ভয়ঙ্কর সব প্রাণির ভয় মাথায় নিয়ে সাগরে মাছ ধরি আমরা। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কখনও পরিবর্তন হয় না। আর সরকারি সহযোগিতাও সব জেলেরা পায় না। অবরোধের সময়, সরকারি সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
শুধু রশীদ মোল্লা নয়, জেলার বেশির ভাগ জেলেদেরই দাবি সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। প্রকৃত জেলেদের জাল ও নৌকা তৈরির জন্য সরকারিভাবে বিনা সুদে ঋণ প্রদানেরও দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার ভোর থেকে জেলেরা সাগরে রওনা হয়েছেন। এবার সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার জেলে সাগরে যাচ্ছেন। অবরোধ শেষে জেলরা ভাল মাছ পাবেন বলে আশা করেন তিনি। মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ ধরার ওপর গত ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।
এরই মধ্যে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের উপকূলে মাছধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বন বিভাগ। সেই হিসেবে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরলেও, সুন্দরবনের উপকূলে প্রবেশ করতে আরও এক মাস ৮ দিন অপেক্ষা করতে হবে জেলেদের। বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় মোট ৩৯ হাজার ৬শ ১৭টি জেলে পরিবার রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে ৬ হাজার জেলেকে দুই ধাপে মোট ৭০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সরকার।
নদী বন্দর/এসএফ