‘আইয়ূব বাচ্চু ছিলেন আমার বন্ধু। স্কুল ফ্রেন্ড। আমরা এক স্কুলে পড়েছি। একসাথে বেড়ে উঠেছি। আমরা চট্টগ্রামের সন্তান। একসাথে আড্ডা দেয়ার একটি জায়গা ছিল আমাদের। প্রায়ই আড্ডায় এসে বাচ্চু বলতো যে, ‘আজ ফেরদৌস ওয়াহিদ এসেছিলেন। উনার সঙ্গে আমি গিটার বাজিয়েছি।’ একদিন বলে যে, ‘আজ আজম খান এসেছেন। উনার সঙ্গে গিটার বাজালাম’।
আমরা তার কথা শুনে বিশ্বাস করতাম না। কোথায় আজম খান, তার সঙ্গে নাকি সে গিটার বাজায়। ভাবতাম চাপাবাজি করে। বাট সেটা সত্যি ছিল। মেধা ও সাধনায় সে বিশ্বখ্যাত গিটারিস্ট হয়েছে। দেশ কাঁপানো ব্যান্ড তারকা হয়েছে। সেই আইয়ূব বাচ্চুরা গুরু বলতেন আজম খানকে। আমি ফ্যান ছিলাম উনার। আমরা বড় হয়েছি তার গান শুনতে শুনতে।
সেই আজম খানের বড় ভাই আলম খান। যার স্মরণে আজ এই সভায় এলাম। আজম খানের ভাই হিসেবে আলম খানের পরিচিত হবার দরকার নেই। কথাগুলো এজন্য বললাম, আমি প্রায়ই ভাবতাম যে আজম খান কি করে এত চমৎকার সুর করেন গানের, গানগুলো কেন এত সুন্দর হয়। যাই শুনি প্রাণে লেগে যায়। পরে জানলাম যে তিনি আলম খানের ভাই। তখন এটা উপলব্দি করলাম আলম খানের মতো সংগীতজ্ঞ যার বড় ভাই তার গান ও সুর তো ভালো হবেই।’
দীর্ঘ এই আলাপচারিতাগুলো দেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের। তিনি আজ ২৩ জুলাই প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবে। সেখানে তিনি অংশ নেন দুই কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলম খান ও অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদকে নিয়ে স্মরণসভায়।
আলম খানকে নিয়ে নিজের বক্তব্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী এই আলোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আলম খানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে আলোচনা হয়েছে কয়েকবার। অতি সজ্জন আর বিনয়ী মানুষ। তিনি কাল জয় করে গেছেন সুরে সুরে, গান দিয়ে। তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি।’
শর্মিলী আহমেদের স্মরণে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ছিলেন শর্মিলী আহমেদ। তাকে সেই ছোটবেলা থেকেই পর্দায় দেখে দেখে বড় হয়েছি। উনার সঙ্গেও আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। তবে তার সঙ্গে মায়ের মতো একটা সম্পর্ক অনুভব করতাম পর্দার মাধ্যমে। তারা চলে গেছেন। আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তাদের স্মৃতি ধরে রাখা প্রয়োজন।
এফডিসিতে আমাদের যে নতুন বিল্ডিংটি তৈরি হচ্ছে সেটা প্রস্তুত হলে সেখানে সব কীর্তিমানদের জন্য একটি কর্ণার করার কথা ভাবছি আমরা। চলচ্চিত্রের যারা কিংবদন্তিরা আছেন সবার বায়োগ্রাফি, ফটোগ্রাফিসহ উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো থাকবে। সকল প্রজন্ম যেন তাদের নিয়ে জানার সুযোগ পায়।’
আলম খান ও শর্মিলী আহমেদ স্মরণে এই স্মরণসভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, এমপি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর, শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সহ সাধারন সম্পাদক সাইমন সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনূরসহ জাদু আজাদ, জেসমিন, আরমান প্রমূখ।
পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, দেওয়ান নজরুল, মুশফিকুর রহমান গুলজার, অপূর্ব রানা, জাকির হোসেন রাজুসহ আরও অনেকে।
আরও ছিলেন বরেণ্য সুরকার, গীতিকার, পরিচালক, প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক মিল্টন খন্দকার, মাকসুদ জামিল মিন্টু, ফুয়াদ নাসের বাবু, এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিসহ আলম খান ও অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদের পরিবারের সদস্যরা।
নদী বন্দর/এসএফ