দেশে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে।
সোমবার (১ আগস্ট) থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ইউরিয়া সারের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এবং চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার সারের বর্তমান দাম ৮১ টাকা। ফলে ৬ টাকা দাম বাড়ানোর পরও সরকারকে কেজিপ্রতি ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কেজিপ্রতি ইউরিয়া সারের ভর্তুকি ছিল মাত্র ১৫ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সারের মূল্য চার দফা কমিয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ডিএপি ব্যবহার হতো ৮ লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১৬ লাখ টন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ার ফলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমেনি, বরং বেড়েছে। ২০১৯ সালে ইউরিয়া ব্যবহার হতো ২৫ লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন।
গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়েছে। এতে দেশে সার আমদানিতে সরকারের ভর্তুকিও বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সারে ভর্তুকি লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, চাহিদার বিপরীতে দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আমন মৌসুম (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ৬ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন, বিপরীতে বর্তমানে মজুত রয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার টন, যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় এক লাখ টন বেশি। অন্যান্য সার যেমন- টিএসপির আমন মৌসুমে চাহিদা এক লাখ ১৯ হাজার টন, বিপরীতে মজুত ৩ লাখ ৯ হাজার টন, ডিএপির চাহিদা ২ লাখ ২৫ হাজার টন, বিপরীতে মজুত ৬ লাখ ৩৪ হাজার টন এবং এমওপির চাহিদা এক লাখ ৩৭ হাজার টন, বিপরীতে মজুত আছে ২ লাখ ১০ হাজার টন।
গত ২৭ জুলাই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির সভায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা ও মরক্কো এ তিন দেশ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টন এমওপি ও ইউরিয়া সার কেনার পৃথক প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৯৮ কোটি ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।
আমদানিনির্ভর এ কৃষি উৎপাদন উপকরণটিতে বরাবরই ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। গত অর্থবছরের তুলনায় এবার প্রস্তাবিত বাজেটে সার বাবদ চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সারে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে সারের দাম বাড়ায় অর্থবছর শেষে এ ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করেছে সরকার।
নদী বন্দর/এসএস