1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে পদ্মাপাড়ের জেলেদের - Nadibandar.com
সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৪ অপরাহ্ন
পাবনা প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০২২
  • ১১০ বার পঠিত

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত ৫নং সাঁড়া ঘাট। ব্রিটিশ আমলে দেশের অন্যতম সাঁড়া নৌবন্দর হিসেবে এটি পরিচিত ছিল। সময়ের বিবর্তনে এখানে নৌবন্দরের কোনো স্মৃতি চিহ্নও নেই। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ সাঁড়া ঘাট এখন ভাঙনের কবলে বিলীনের পথে।

ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের আরামবাড়িয়া থেকে পাকশী ইউনিয়নের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত আট কিলোমিটার নদী তীরের সাত কিলোমিটারে নদীরক্ষা বাঁধ রয়েছে। কেবল মাঝের সাঁড়া ৫নং ঘাট এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারে বাঁধ নেই। প্রতিবছর নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হলেই এখানকার মানুষের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়।

গতবছর এ ঘাটের প্রায় ৫০ ফুট এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সরকারিভাবে নির্মিত সাঁড়া মৎস্য সমিতির ঘরটির একাংশ গত মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভেঙে নদীতে চলে গেছে। দুই-একদিনের মধ্যেই পুরো ঘরটি নদীতে বিলীন যেতে পারে। আশপাশের দোকানপাটগুলোও যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। আর ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদীপাড়ের কাঁচা রাস্তাটিও বিলীন হয়ে যাবে। নদী থেকে বসতবাড়ির দূরত্ব মাত্র ১৫ ফুট। ভাঙনে রোধে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে যে কোনো সময় নদীতে বাড়িঘর বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সাঁড়া ঘাট এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ও মৎস্য সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম (৭০) বলেন, ৫নং সাঁড়া ঘাটের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে প্রায় সাত কিলোমিটারে নদীরক্ষা বাঁধ রয়েছে। বর্ষাকাল এলেই আমাদের মাঝে ভাঙনে আতঙ্ক শুরু হয়। এবার অবস্থা তো খুবই ভয়াবহ। নদী ভাঙতে ভাঙতে বসতবাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। এবার ভাঙনে নদীতে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যেতে পারে। আমরা খুবই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মিলন বলেন, এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এটি মূলত জেলে পল্লী হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেন, বাপ-দাদার বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেলে পথে বসতে হবে। সবাই এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধি ও পাউবোর কর্মকর্তাদের কাছে আমরা গিয়েছি। পাশাপাশি মানববন্ধন করেছি কিন্তু কেউ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি।

River Corrosion

জেলে রঞ্জু হালদার আক্ষেপ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা প্রায়ই এসে ভাঙন দেখে যায় কিন্তু ভাঙন থেকে রক্ষা করার উদ্যোগ তো কেউ নেয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আসে মাপামাপি করে চলে যায়। আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর কী তারা বাঁধ দেবে? দুইপাশেই বাঁধ আছে অথচ আমাদের মতো গরিবদের বসতি এলাকায় শুধু বাঁধ নেই। আমরা কার কাছে আমাদের কষ্টের কথা বলবো। কে শুনবে আমাদের কথা?

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিক বলেন, সাঁড়ার ৫নং ঘাট এলাকার মানুষজন খুবই আতঙ্কে রয়েছে। এখানে ভাঙন শুরু হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখান থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু, পূর্বপাশে আধা কিলোমিটার দূরে ঈশ্বরদী ইপিজেড। এসব স্থাপনাও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। এলাকার লোকজনের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।

তিনি আরও বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমাদের কী করণীয় আছে?

River Corrosion

সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, সাঁড়ার ৫নং ঘাটের বসতবাড়ি, দোকানপাট এখন হুমকির মুখে। যে কোনো সময় বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সাঁড়ার ৫নং ঘাটের দুই পাশে প্রায় সাত কিলোমিটার নদীরক্ষা বাঁধ রয়েছে। অথচ শুধুমাত্র মাঝের ৫নং ঘাট এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ নেই। এখানে পাউবো কর্তৃপক্ষ কেন বাঁধ নির্মাণ করছে না তা আমার বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বারবার ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীকে এ বিষয়টি অবহিত করেছি। পাউবোর কর্তৃপক্ষ এসে বাঁধ নির্মাণের জন্য নদীর তীর পরিমাপ করেছে কিন্তু বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ভাঙন শুরু হলে এখানকার প্রায় তিন হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, সাঁড়ার ৫নং ঘাট এলাকায় আমি নিজে গিয়েছিলাম। গতবছর নদী ভাঙন শুরু হলে সেখানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। এখানে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

নদী বন্দর/এসএস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com