পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সেতুর সব গার্ডার তৈরি এবং সুপার টি-গার্ডার স্থাপন হয়ে যাওয়ার পর এখন চলছে যান চলাচল উপযোগীর কাজ। আর পদ্মা সেতু ঘিরে পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে গেছে। যুগান্তকারী পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে পুরো জনপদে।
এ পদ্মা সেতু মাওয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে জাজিরাকে। এ সেতু বন্ধনে একসময় অবহেলিত জনপদ জাজিরার চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। নানা ধরনের অবকাঠামোতে ছেয়ে গেছে এলাকা। মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। জমির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যুগান্তকারী পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে পুরো জনপদে।
সংযোগ সেতুর সুপার টি-গার্ডার বসে যাওয়ায় এখন যান চলাচল উপযোগী করার কাজ চলছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ফ্লিড ইঞ্জিনিয়ার নাইমুল হক ভূইয়া বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ হচ্ছে গর্ব করার মতো। কাজের মানের সঙ্গে কোনো আপস করা হয়নি। বলেন, বাংলাদেশের এটা একটা বড় প্রকল্প, আর কাজের ক্ষেত্রে আপসহীনভাবে করা হয়েছে।
৬ দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সঙ্গে দু’পাড়ে আরও প্রায় ৩ কিলোমিটার সংযোগ সেতুর ৪৩৮টি সুপার-টি গার্ডারের মাওয়া প্রান্তে তৈরি বাকি ১২টি। আর স্থাপন বাকি ৯৪টি। তবে জাজির প্রান্তে পুরোপুরি সম্পন্ন।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বসেরা উপাদান। ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মান। পরামর্শক প্যানেলের অনুমোদন ছাড়া প্রকল্পের কাজে কোনো উপাদান ব্যবহার করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সেতুর কার্যকাল ১০০ বছর ধরা হলেও তার চেয়ে বেশি মেয়াদে এটি টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর কাজে যে উপাদানগুলো ব্যবহার হচ্ছে সেগুলোকে উপযোগী করে তুলতে কাজ করা হয় বিশাল এ এলাকাজুড়ে।
সেতুর পিলার তৈরিতে যে স্টিলের টুকরো ব্যবহার হয়েছে তার সবই এসেছে চীন থেকে। একইভাবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যান জোড়া দেওয়ার কাজ দেশে হলেও এ কাঠামোর স্টিলের টুকরোগুলো এসেছে চীন থেকে।
সংযোগ সড়ক থেকে শুরু করে সেতুর নির্মাণকাজে যে পাথর ব্যবহার হয়েছে তা আনা হয়েছে ভিয়েতনাম, দুবাই, ভারত ও ওমান থেকে। দেশের মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি থেকে বাছাই করা পাথরের একটি অংশও ব্যবহার হয়েছে এ সেতুতে।
তবে সেতুর বড় একটি অংশজুড়ে ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের উপাদানও। প্রকল্পের পিলার, ভায়াডাক্ট, সংযোগ সড়কসহ প্রতিটি কাজে যত রড ব্যবহার হচ্ছে, তার শতভাগই দেশীয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে অল্প পরিমাণে মিহি সিমেন্ট আনা হলেও বেশির ভাগ সিমেন্টই ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশি কোম্পানির।
এর আগে সেতু সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, সেতু পাইল ১২০ মিটার থেকে ১২৮ মিটার মাটির গভীরে গেছে, যা বিশ্ব রেকর্ড। আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড হলো প্রতিটি স্প্যান ৩২-৩৩ টন ওজনের। যেগুলো সেতুর পিলারের ওপর বসানো হয়।
স্প্যানের ওপর ও নিচের অংশে বসাতে নির্মাণাধীন রোড স্ল্যাবের সিমেন্ট ও রড ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের। তবে রেলওয়ে স্ট্রিনজারগুলো আনা হচ্ছে লুক্সেমবার্গ থেকে।
নদী বন্দর / এমকে