গাজীপুরের শ্রীপুরের সাটিয়াবাড়ীতে ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানিতে কৃষিজমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া এ পানি খাল-বিলে পড়ে যেমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তেমনই মারা যাচ্ছে মাছ।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে ধলাদিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী ২০ কৃষক গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৫ সেপ্টম্বর) সকালে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া।
নয়ন মিয়া জানান, ধলাদিয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনসহ ২০ কৃষক সাটিয়াবাড়ী এলাকার ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্যে ও দূষিত পানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধলাদিয়া এলাকার গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ডার্ড কম্পোজিট কারখানা স্থাপনের পর থেকেই পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা করছে না কর্তৃপক্ষ। বয়লারের বিষাক্ত কোলো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এছাড়া কারখানার দূষিত পানি আশপাশের খাল-বিলে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মারা যাচ্ছে মাছ। নষ্ট হচ্ছ পরিবেশ। এছাড়া ১ হাজার একর কৃষিজমিতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না।’
ধলাদিয়া (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের অপর কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ‘ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানি বিলে পড়ছে। বিলের পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। পঁচা পানির কারণে বিলে মাছও ধরতেও পারছে না মৎস্যজীবীরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগে বিঘাপ্রতি ৩০/৩৫ মণ ধান পাওয়া যেত। কিন্তু ফসলি জমির পানি পঁচে যাওয়ায় এখন ১৫ মনের বেশি ধান উঠানো সম্ভব হয় না।’
ধলাদিয়া (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন ও হেলাল উদ্দিন জানান, যখন ধানে ফুল আসে তখন ধান গাছের গোড়া পচে মরে যায়।’
স্থানীয় ক্ষুদ্র ববসায়ী ও দোকানিরা জানান, ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বর্জ্যের কারণে বিলের পানি পঁচে গেছে। দুর্গন্ধে বাজারে ও দোকানে বসে থাকা যায় না। এমন কি মসজিদের মুসল্লিদের নামাজ পড়তেও সমস্যা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, কারখানা থেকে স্থানীয় বিন্নাইদ ব্রিজর নিচে বড় পাইপ দিয়ে ফেলা হচ্ছে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত কালো পানি।
ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আকাশ এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘আমি পাঁচ মাস আগে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। আমি নিজেও পঁচা পানির দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করি। কারখানার বর্জ্যে ও দূষিত পানি আশপাশের কৃষিজমিতে ফেলায় ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।’
নদী বন্দর/এসএইচ