বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে সরে গিয়ে দুর্বল হবার পর সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা উপকূলে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে হালকা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে জেলার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুটের অধিক উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানিতে ভেসে গেছে শত শত বিঘা মৎস্য ঘের। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার জরাজীর্ণ ৩৫টি পয়েন্টে প্রায় ৬২ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম বলেন, ‘থেমে থেমে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নদীতে জোয়ারের সময় বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টির কারণে কয়েক শ বিঘা মাছের ঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া গাবুরা, নাপিতখালি, জেলেখালিসহ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’
উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘দাতিনাখালীর এলাকাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চুনা নদীর স্রোত লোকালয়ের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কয়েকদিন আগেই বাঁধের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে বেড়িবাঁধ ধসের ঘটনা ঘটেছে। আবার নতুন একটি জায়গায় একই ঘটনা ঘটছে।’
আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের গদাইপুর এলাকায় খোলপেটুয়ার নদী ৬-৭ হাত জারজীর্ণ বেঁড়িবাধ ভেঙে যায়। পরে তা স্থানীয়দের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করা হয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় সব নদীর পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের সময় বাঁধের কানায় কানায় পানি উঠছে।’
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি বর্তামানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গপোসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আগামী ২-১ দিন আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকবে তারপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সাকাল থেকে (১৪ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা পযন্ত জেলায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) আবুল খায়ের বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগের আওতায় সাতক্ষীরা-১ ও সাতক্ষীরা-২ এই দুটি পোল্ডারে মোট ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি পয়েন্টে প্রায় ৬২ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ অনেক জায়গায় চলমান রয়েছে।’
নদী বন্দর/এসএইচ