মেহেরপুরে বেগুন গাছে গ্রাফটিং (কলম) পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়েছেন কৃষক ফারুক হোসেন। মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন তিনি। আশা করছেন আরো ৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবেন তিনি। বর্তমানে ফারুক হোসেনের দেখাদেখি অসময়ে টমেটো চাষে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার অনেক চাষি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের হিজুলী গ্রামের বাসিন্ধা ফারুক হোসেন। পরীক্ষামূলকভাবে গ্রাফটিং বা কলম পদ্ধতিকে টমেটোর চাষ করেছেন এ কৃষক।
সরেজমিনে ফারুক হোসেনের টমেটো ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, সারিসারি বেগুন গাছের উপরে থোকা থোকা টমেটো ঝুলছে। বেগুন গাছে টমোটোর চাষ শুনে আশেপাশের এলাকার অনেকে দেখতে এসেছেন। আগামীতে এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করবেন বলে পরামর্শ নিচ্ছেন অনেক কৃষক। আবার অনেককেই ছবি তুলতে দেখা গেছে।
টমেটোর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক ফারুক হোসেন
কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘ইউটিউব দেখে তিনি মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে বেগুন গাছ লাগিয়ে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। এখনও ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবো। অসময়ে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে আমি অনেক খুশি। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে গ্রাফটিং পদ্ধতিকে টমেটো চাষ করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেগুন গাছে টমেটো চাষ করার বিষয়ে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। প্রথমে ৫ শতাংশ জমিতে আলাদা করে বেগুনের আবাদ করি। এরপর পাশেই টমেটোর বীজতলা তৈরি করি। বেগুনের চারা বড় হতে থাকলে ডালপালা কেটে তার সাথে টমেটোর ডগা গ্রাফটিং করেছি। যেহেতু বেগুন গাছ অনেক দিন বাঁচে আর পানি সহনশীল তাই বেগুন গাছে টমেটো চাষ করেলে দীর্ঘ সময় ফলন পাওয়া যায়। টমেটো আবাদে তেমন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। শুধুমাত্র ফেরোমনসেক্স ব্যবহারই যথেষ্ঠ। তাই বিষমুক্ত টমেটো পাওয়া সম্ভব।’
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুরের গ্রামের কৃষক হবিবুর রহমান বলেন, ‘গ্রাফটিং পদ্ধতিতে বেগুন গাছে টমেটোর চাষ হচ্ছে। কৃষক ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাচ্ছেন। অসময়ে বাজারে এ টমেটোর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ওই কৃষক সামনের বছর এক বিঘা জমিতে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করবেন। তার দেখাদেখি আমিও একইভাবে টমেটোর চাষ করবো।’
বাজারে বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে টমেটো
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক তারেক হোসেন ও সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের কৃষক রমিজ হোসেনও একই পদ্ধতিতে টমেটো চাষের আগ্রহের কথা জানান।
মেহেরপুর আমঝুপি এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ গ্রাফটিং বা কলম পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। আবার ক্রেতারা অসময়ে বাজারে সুস্বাধু টমেটো পাচ্ছেন। আমরা মেহেরপুর কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ফারুক হোসেন নয় আশা করছি আরো অনেক কৃষক অসময়ে ড্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করতে শুরু করবেন। এতে তারা যেমন প্রচুর ফলন পাবেন ঠিক একইভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
নদী বন্দর/এসএইচ