টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বরগুনায় আমন বীজের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। খেত প্রস্তত করেও বীজ সংকটের কারণে মাঠ খালি রাখতে হয়েছে। এতে করে বরগুনার প্রধান ফসল আমন চাষ নিয়ে বিপাকে চাষিরা।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহজুড়ে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ৪৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া আগস্ট মাসে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে আমনের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষকরা জানিয়েছেন, যারা একটু উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন তাদের বীজ নষ্ট হয়নি। এসব বীজ কিনে আনছেন অনেকে। আমন বীজ ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন অনেকে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বীজ কিনে কিছু কৃষক জমিতে রোপণ করলেও বিপুল পরিমাণ জমির বীজের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেকের জমি অনাবাদি থেকে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনায় চলতি বছর মোট ৯৮ লাখ ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর, আমতলীতে ২৩ হাজার ৩৭১, তালতলীতে ১৬ হাজার ২৩০, বেতাগীতে ১০ হাজার ৬৯২, বামনায় ৬ হাজার ৩৩০ এবং পাথরঘাটায় ১৬ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল ও স্থানীয় জাতের আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের প্রধান ফসল রোপা আমন। কৃষকদের বীজ দিয়ে সহায়তা করে কৃষি বিভাগ। বরগুনার ৫৫ ভাগ জমিতে বি-আর, ব্রি ও বিনা এই তিন জাতের উফশী ধান আবাদ করা হয়। এ ছাড়া বাকি ৪৫ ভাগ জমিতে আবাদ হয় স্থানীয় জাতের রোপা আমন।
বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, আমনের জন্য দুই একর জমিতে বীজতলা করছি। বৃষ্টিতে হালচাষ করতে পারি নাই। এখন পানি কমছে, চাষবাস কইরা জমিতে বীজ লাগামু। কিন্ত বীজ সব পইচ্চা নষ্ট হইয়া গ্যাছে। এহন কী করমু খেতে? নতুন কইরা বীজ করারও সময় নাই এহন। তাই খেত অনাবাদি থুইয়া দিছি।
জেলায় সবচেয়ে বেশি আমন চাষ হয় আমতলী উপজেলায়। উপজেলার হলদিয়া, আঠারগাছিয়া, আমতলী সদর এবং তালতলী উপজেলার ছোটবগী, পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, আমনের ক্ষেত বীজ রোপণের জন্য প্রস্তত করা হলেও বীজের অভাবে মাঠ খালি পড়ে আছে।
চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার মৃধা বলেন, আমনের খেতে এহন বীজ রোয়ার সময়। জমিন রেডি করছি, কিন্তু মোগো বীজ সব শ্যাষ, বৃষ্টির পানি জইম্মা সব বীজ নষ্ট।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, আমন বরগুনার কৃষকদের প্রধান ফসল। কিন্ত এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, অতি বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হওয়া একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমরা সরকারিভাবে কৃষকদের আমনের বীজ সরবরাহ করেছিলাম এবং বীজ বপনের সময় উঁচু জমি নির্বাচনের পরামর্শও দিয়েছি। কিন্ত এবার বীজ নষ্ট হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি সংকট নিরসনে কৃষকদের বীজ সংকট কাটানোর জন্য। যাদের অতিরিক্ত বীজ আছে তাদের কাছ থেকে বীজ কিনেছেন অনেক কৃষক। তবুও সংকট কাটেনি।
নদী বন্দর/এসএইচ