ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, অসময়ে বৃষ্টি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। তাই ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। এখানে করোনা রোগী এবং ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা জোনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেডের ব্যবস্থা আছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাখালীতে ডিএনসিসির কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে মেয়র এ কথা বলেন। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং ডিএনসিসি মেয়র শুরুতেই হাসপাতালটি ঘুরে দেখেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পাশে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন। ডেঙ্গু রোগীদের খোঁজ খবর নেন।
মেয়র বলেন, করোনা মহামারির সময়ে মানুষকে চিকিৎসা দিতে আমরা ডিএনসিসির মার্কেটকে কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করি। মার্কেট থেকে আমরা ২০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ করতে পারতাম। টাকার দিকে না তাকিয়ে মানুষের সেবার দিকে গুরুত্ব দিয়ে ২৫৮টি দোকানের বরাদ্দ বাতিল করে দেই। আমরা এক হাজার বেড সম্পন্ন হাসপাতালটি নির্মাণ করি। এখানে ২১২টি আইসিইউ বেড রয়েছে। করোনা রোগীর সংখ্যা এখন অনেক কম। আমরা এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
মেয়র আরো বলেন, জনগণের চিকিৎসা সেবা বাড়াতে ডিএনসিসি এলাকায় ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হবে। ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালকে জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে। ৫৪টি ক্লিনিকে জনসাধারণ প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করবে। উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন হলে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডিএনসসি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হবে। AIIB-এর সাথে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ৫৪টি ক্লিনিক নির্মাণে AIIB অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়ন করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণের সচেতনতা সবেচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অভিযান পরিচালনা করছি। দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু বাড়িতে বা নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পাওয়ায় জরিমানা করে আসার কিছুদিন পর অভিযান চালালে আবারও লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। এখন থেকে আর ছাড় নেই। কোনো ভবনে দ্বিতীয়বার অভিযানে লার্ভা পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সচেতন করতে এবং অন্যান্য সমস্যা জানতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিদর্শন ও মতবিনিময়সভা শুরু করেছেন বলেও জানান ডিএনসিসি মেয়র।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতা কার্যক্রম ও অভিযান চলমান থাকবে। ‘
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতাল এখন ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য তৈরি রয়েছে। ১০০০ শয্যার মধ্যে ৬ জন কডিভ রোগী আলাদাভাবে সেবা নিচ্ছে। এ হাসপাতালে ১০৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে এবং আরো প্রায় ৪০০ শয্যা ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি নেই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে৷ জনসাধারণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সবাই মিলে একসাথে ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সবধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ-বরাদ্দ, জনবল, অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটসহ যখন যা চেয়েছেন তাই সরবরাহ করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করার জন্য যা যা করণীয় তার সব করা হয়েছে। টিভিসি তৈরি করা হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি চলমান থাকবে।
পরিদর্শনে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. মো. জোবায়দুর রহমান, ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগে. জেনা. এ কে এম শফিকুর রহমান এবং ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক প্রমুখ।
নদী বন্দর/এসএইচ