বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ধরাবাধা নিয়ম থেকে বের হয়ে এসে শিক্ষাগ্রহণের দরজা উন্মুক্ত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় নানামুখী দেওয়াল রয়েছে। শিক্ষা যদি জীবনব্যাপী হয় তাহলে উচ্চশিক্ষার দেওয়ালগুলো ভেঙে দিতে হবে। একজন শিক্ষার্থীকে যে কোনো বয়সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। যদি কোনো শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক গণ্ডি পার করে কর্মজীবনে জড়িয়ে পড়েন এবং পরবর্তীসময়ে উচ্চশিক্ষায় ফিরতে চান তাহলে তাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ধরাবাধা নিয়ম থেকে বের হয়ে এসে শিক্ষাগ্রহণের দরজা উন্মুক্ত রাখতে হবে।
রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) আয়োজনে ‘শিক্ষা এবং নৈতিকতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা খুব দক্ষ মানুষ হলাম, কিন্তু আমার ভেতরে যদি নৈতিকতা বোধ না থাকে তাহলে সেই শিক্ষার কোনো মূল্য নেই। সঠিক শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধও শেখাতে হবে।
সেমিনারে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের রাষ্ট্র ও জাতির সামনে একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং তার কৌশল বাস্তবায়নের জন্য কর্মনীতি দরকার। নানা ধারা-উপধারায় বিভক্ত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। এর রূপ ও প্রকৃতি অত্যন্ত জটিল। যে রাষ্ট্রে অপসংস্কৃতি প্রবল, সংস্কৃতি নির্জীব ও অপসংস্কৃতিকেই রাষ্ট্র সংস্কৃতি বলা হচ্ছে, তাতে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে নীতিবিদ্যাকে স্থান দেওয়া কঠিন।
তিনি বলেন, আমাদের জীবনধারায় উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আমরা যথাসম্ভব গ্রহণ করবো। আমাদের কল্যাণে আমরা সেগুলোকে ব্যবহার করবো। কিন্তু সেগুলো দ্বারা আমরা পরিচালিত হবো না।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, নীতিশাস্ত্রের সফল বিকাশ ঘটাতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদি এর সঙ্গে পরিবার সংযুক্ত থাকে তাহলে বিকাশটি আশানুরূপ হয়। কিন্তু আমাদের দেশের সমাজ বাস্তবতা পাল্টেছে, পরিবারের ভেতর সুনীতির চর্চা কমেছে। কোনো কোনো পরিবারের সুনীতির জায়গা নিয়ে নিয়েছে দুর্নীতি।
তিনি আরও বলেন, তারপরেও অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের মূল্যবোধ চর্চায় আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু ঘরের বাইরের জগতে নৈতিকতার অভাব থাকলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতি চর্চায় উৎসাহিত না করলে পরিবারগুলোর উদ্যোগে শুধু একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত সন্তানরা যেতে পারে।
মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে পরীক্ষানির্ভর ও সনদমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। তাতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধার পরিচয় পাওয়া যায় না, বিকাশ ঘটা তো দূরের কথা। এই শিক্ষা নৈতিকতার বিকাশে সহায়ক নয়।
সেমিনারে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড, দিল আফরোজা বেগম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সাবেক উপাচার্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ. লে. জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক খুরশীদা বেগম ও রাওয়ার সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) আলাউদ্দিন এম এ ওয়াদুদসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর/এসএইচ