দেশের মানুষ মুক্তি চায়। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অথনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতির কাঠামোকে হত্যা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই সরকার আন্দোলন করেছে।
কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বন্ধ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না’।
আজ শনিবার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মূল করে দিতে চায়। এতে কি নির্মূল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেযেছে? পায়নি। আরো উত্তাল হয়ে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।
রাজশাহীর গণসমাবেশের উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফকরুল বলেন, গত তিন দিন ধরে পদ্মার ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে হু হু করে লেগেছে। তারপরও আপনারা এখান থেকে এক বিন্দুও সরেননি। খেয়ে না খেয়ে। কিসের ভালোবাসায়, কিসের তাগিদে আপনারা তিন ধরে এখানে কাটালেন? কারণ আপনারা মুক্তি চান। ভয়াবহ দানবের হাত থেকে আপনারা মুক্তি চান।
তিনি বলেন, রাজশাহীর মাটি সংগ্রামের মাটি। শাহ মখদুম সাহেবের ভূমি এটা। এটা সেই জায়গা যেখানে মানুষ ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করেছে। বিদ্রোহ করেছে। অনেক বরেণ্য মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। এই মাটিতেই তারা গড়ে উঠেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন,আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনীতি দল নয়। এটা একটা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে করে সম্পদের পাহাড় করেছে, সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। কয়দিন আগে ২৫ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য তাদের জেলথানায় নেওয়া হয়েছিল। আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হয় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯টা গায়েবি কম্পানিকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। সে সময় গানপাউডার দিয়ে একটা বাসেই ১১ জনকে হত্যা করেছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫টা নির্বাচন হয়ে গেল। এরা ক্ষমতায় আসার পরে কী করল? ওই ব্যবস্থা পাল্টে দিল। কেন, তারা কিছুদিন পরে বুঝতে পারল জনগণ তাদের পছন্দ করছে না। তাই সেটা পাল্টে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অন্যথায় দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কী যেন নাম তার? ওবায়দুল কাদের সাহেব। তিনি বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য বারবার কাটাছেঁড়া করেছ, সেই সংবিধান? তিনটা অনুচ্ছেদ রেখেছে, যার অধীনে একটা কথাও বলা যাবে না। সেই সংবিধান চলতে পারে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজশাহীতে এই বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
রাজশাহীতে এটাই বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ। এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈসা।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিনা রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহসাংগঠিনক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন সওকত ও ওবাইদুর রহমান, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বগুড়ার এমপি গোলাম মাহমুদ সিরাজ, এমপি মোমাররফ হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নদী বন্দর/এসএইচ