ইউক্রেনে আবারও ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে রাশিয়া। শুক্রবার রাজধানী কিয়েভসহ উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিমের শহরগুলোতে দিনভর ৭৬টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চায় মস্কো।
এরমধ্যে ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সিএনএনের এক প্রতিবেদন বলা হয়-প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় খারকিভে।
স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। পরে একে একে অন্যান্য অঞ্চলে। হামলায় ক্রিভিহ রিহ শহরে আবাসিক ভবন ধসে পড়লে প্রাণ হারায় দুজন। আহত হয় দুজন শিশুসহ অন্তত ৮ জন। এছাড়াও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি অঞ্চল।
কিয়েভ, ওডেসা, পোলতাভা, ঘাইটমায়ার, খারকিভ এবং সুমিসহ ইউক্রেনজুড়ে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে চলে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো টিইউ-৯৫ বিমানের সাহায্যে গতানুগতিক পদ্ধতিতে নিক্ষেপ করা হয়। এাছাড়া কৃষ্ণ সাগর থেকে কালিব্র ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। আরও ছিল এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র। টিইউ-২২এম৩ বোমারু বিমান নিক্ষেপ করেছিল কেএইচ-২২, এসইউ-৩৫ এবং কেএইচ-৫৯ ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্ডজল মিসাইল বহনকারী মিগ-৩১কেও আকাশে দেখা গেছে বলে জানান তিনি। খারকিভে এস৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা ১০ বার আঘাত করার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন।
কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কাস্পিয়ান সাগরে রুশ রণতরী থেকে কয়েকটি টিইউ-৯৫ বোমারু বিমান ইউক্রেনে হামলার উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। বিমানগুলো সুমি, খারকিভসহ বিভিন্ন শহরে কমপক্ষে ৪০টি দূরপাল্লার কেএইচ-১০১ ক্রুজ মিসাইল ছোড়ে।
কাস্পিয়ান সাগর থেকে বোমারু বিমান ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে কৃষ্ণ সাগরে অবস্থানরত রুশ যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্যালিবার মিসাইল ছোড়া শুরু হয়। একই সময় ক্রিমিয়ার বিমান ঘাঁটি থেকে আরও কয়েকটি বিমান হামলায় যোগ দেয়।
নিকোলায়েভের গভর্নর ভিতালি কিম বলেছেন, ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রায় ৬০টি মিসাইল ছুড়েছে। কৃষ্ণ সাগরীয় নৌবহর থেকেও দুই দফায় মিসাইল ছোড়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে প্রায় একশ মিসাইল ছুড়েছে রাশিয়া। তীব্র এ হামলায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উত্তরের খারকিভ, সুমি অঞ্চলের পাশাপাশি পোলতাভা এবং ক্রেমেনচুকের কেন্দ্রীয় শহরগুলোও।
কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো টেলিগ্রামে মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। জানান, হামলার পর শুক্রবার রাজধানী কিয়েভের সব জেলায় পানি সরবরাহ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ভূগর্ভ স্টেশনগুলোকে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে।
জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার হামলার ফলে বেশ কয়েকটি রেলপথের বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কাজ করছে না পাতাল রেল। বন্ধ হয়ে গেছে গণপরিবহণ। তিনি বলেন, রাজধানীর পূর্ব প্রান্তের তিন জেলা-হলোসিভস্কি, দিনিপ্রোভস্কি এবং দেসনিয়ানস্কিতে চরম আঘাত হেনেছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে উত্তর-পূর্ব খারকিভ এবং কেন্দ্রীয় কিরোভোহরাদ। দোনেৎস্কের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল এবং সেন্ট্রাল দিনিপ্রপেট্রোভস্কের ট্রেন পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা জানান, ব্যাকআপ ডিজেল লোকোমোটিভের অধীনে ট্রেনগুলো চলতে থাকবে। খারকিভের মেয়র ইহোর তেরেখভ শুক্রবার সকালে নিশ্চিত করেছেন যে, খারকিভ শহর বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। ওলেহ সিনিহুবভ নামের এক কর্মকর্তা টেলিগ্রামে জানান, হামলার সূচনা হয় সকাল ৭টায়।
এস৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমে আঘাত হানে কুপিয়ানস্কের একটি হাসপাতালে। এতে সংক্রামণ রোগ ইউনিট আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। এছাড়া খারকিভ শহর এবং খারকিভ অঞ্চলের চুহুইভ জেলায় অবকাঠামোও আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
দক্ষিণে ঝাপোরিজঝিয়াতে ১৫টি রকেট ছোড়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর-পশ্চিম ঝিটোমির অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, প্রাথমিক তথ্য অনুসারে রাশিয়া একই সময়ে রকেট এবং কামিকাজে ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।
কেন রাশিয়া এই সপ্তাহে তার হামলা জোরদার করেছে তা স্পষ্ট নয়। তবে অনেকেই মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স মিসাইল পাঠানোর পরিকল্পনার ফসলই হতে পারে এই হামলা।
ইউক্রেনের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বছরে আরও বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। গার্ডিয়ানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ এ তথ্য দিয়েছেন।
এর আগে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দুই লাখ সেনা নিয়ে নতুন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্রেমলিন। ৩ ডিসেম্বর নেওয়া সাক্ষাৎকারটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
নদী বন্দর/এসএম