ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কৃষি ক্ষেত্রে সরিষা আবাদে ব্যাপক জোড় দিয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ময়মনসিংহে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ জমিতে সরিষা চাষ করছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর ময়মনসিংহে পাঁচ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হলেও এবার সেই আবাদ বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ২৫ হেক্টর। জেলার ৩৯ হাজার ৫০০ কৃষককে এক কেজি করে সরিষা বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে বারি ১৪, বিনা-৪, ১৫ ও ১৭ জাতের সরিষা রয়েছে।
জেলার গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার বলেন, এ বছর কৃষি অফিস থেকে এক কেজি সরিষার বীজ দিয়েছিল। নিয়মিত খোঁজখবরও রাখছে। গতবার করেছিলাম ৪০ শতাংশ। এ বছর ১৮০ শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে।
একই ইউনিয়নের তাতকুড়া গ্রামের কৃষাণী মোছা. পারভীন মনি বলেন, আমি এ বছর ৩০ শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। তবে, এই প্রথম কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে বারি সরিষা-১৪ আবাদ করেছি। কৃষি অফিসের লোকজন নিয়মিত সরিষা ক্ষেতের দেখাশোনা করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
একই উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মো. জাহাঙ্গীর হাসান রতন বলেন, প্রতি বছরই সরিষা চাষ করি। তবে এ বছর কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে ৮০ শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এর মাঝে ৬০ শতাংশ জমির সরিষা বীজ ও সার কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা পেয়েছি।
জেলার সদর উপজেলার বোরোরচর গ্রামের কৃষক শামসুল হক বলেন, গত ২০ শতাংশ জমিতে সরিষা করে লাভবান হয়েছিলাম। তাই, এবার ৩০ শতক জমিতে বারি ১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছি। নভেম্বরের শুরুতে আমন ধান কাটার পরপরই সরিষা রোপণ করি। এখন ক্ষেতজুড়ে হলুদের সমারোহ। জানুয়ারির শেষ দিকে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সরিষা তোলা যাবে। সরিষা মাড়াই শেষে বোরো ধান আবাদ করবো। যেভাবে ফলন হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে, এবারও লাভ হবে।
ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরর উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কৃষি ক্ষেত্রে সরিষা আবাদে ব্যাপক জোড় দিয়েছে। সরকার আগামী তিন বছরের একটি পরিকল্পনা নিয়েছেন।
যাতে ৪০ শতাংশ তেল আমদানি নির্ভরতা কমানোর কথা বলা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা ছয় মাস ধরে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করি। এছাড়া, যে সমস্ত জায়গা অনাবাদি আছে। সে সমস্ত জমিতে সরিষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি।
তিনি আরও বলেন, জেলার ৩৯ হাজার ৫০০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে সরিষা বীজ দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা বারি ১৪, বিনা-৪, ১৫ ও ১৭ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। এবার ফলনও ভালো হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ