ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে ৯টা। অন্যান্য দিন এ সময়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতের সঙ্গে যথারীতি আমদানি, রফতানি বাণিজ্য সচল ও পণ্য খালাসের কার্যক্রম শুরু হলেও ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত এখন যেন তা থমকে দিয়েছে। ফলে ধীরগতি নেমে এসেছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গেলে কিছুটা স্বাভাবিক হবে বন্দরের কার্যক্রম।
এর আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৪ শতাধিক ট্রাক পণ্য আমদানি ও দেড়শো ট্রাক পণ্য রফতানি হলেও গত দুদিন ধরে ঘন কুয়াশায় যানবাহন চলাচল ব্যহত হওয়ায় আমদানির সংখ্যা কমে এসেছে ৩ শতাধিকে। রফতানিও কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকের কাছাকাছি।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারী) সকাল ৯টায় বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশায় রাস্তা ঢেকে আছে। সামনের কোন কিছুই চোখে দেখা যাচ্ছে না। পণ্যবহনকারী ট্রাক চালকরা হেড লাইট জ্বালিয়েও রাস্তায় চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে। বন্দরের অফিসগুলোতেও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অধিকাংশের চেয়ার ফাঁকা। পণ্য খালাসের সাথে জড়িত বন্দর শ্রমিকেরাও কর্মস্থলে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রমে যেন স্থবিরতা নেমে এসেছে।
পণ্য বহনকারী ট্রাক চালকেরা বলছেন, এর আগে যখন তারা ঢাকা বা তার আশপাশ এলাকা থেকে পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসতেন সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগতো। তবে কিছুদিন হচ্ছে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় সময় মত বন্দরে পৌঁছাতে পারছেন না। এছাড়া কনকনে শীত আর কুয়াশায় রাস্তায় গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কখনো দ্বিগুণ সময় আবার দুদিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। যানজটে বেড়েছে সিরিয়ালের নামে আরিচা-দৌলতদিয়া ঘাটে চাঁদাবজি। এতেও অনেকে এ পথে পণ্য পরিবহন করতে চাইছে না।
এদিকে বন্দরে পণ্য খালাসের কাজ করছে দুটি সংগঠনের প্রায় দুই হাজার হ্যান্ডলিংক শ্রমিক। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ভোরে তাদের বন্দরে আসতে হয়। তীব্র শীতে বন্দরের দিন আনা দিন খাওয়া এসব শ্রমিকেরা শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পেতে দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত বন্দর, কাস্টমস, বাণিজ্যিক বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কেউ তাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। ফলে কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের পণ্য খালাসের কাজ করতে হচ্ছে।
জানা যায়, দেশের সবগুলো স্থল পথে যে পরিমাণে পণ্য আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় তার প্রায় ৭০ শতাংশই হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
গতকাল সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দিনভর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২৯৩ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, কেমিক্যাল, মেশিনারিজ দ্রব্য, তৈরী পোশাক, গার্মেন্টস, কসমেটিকস, শিশু খাদ্য, মাছ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ৯৪ ট্রাক। রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাট ও পাট জাত পণ্য, তৈরী পোশাক, কেমিক্যাল, মাছ, কাপড়ের টুকরা( ঝুট), টিস্যু, মেলামাইন সামগ্রী। প্রতিদিন আমদানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ হয় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা।
নদী বন্দর / জিকে