সাতক্ষীরার দেবহাটার ভাতশালা এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্ধারণকারী ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধের কিছু অংশ নদীগর্ভে ধসেও পড়েছে। দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করা না হলে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ।
সাতক্ষীরার দেবহাটা ও কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সীমানা নির্ধারণ করেছে। এ নদীর ভাতশালা নামকস্থানের বেড়িবাঁধ জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ভাঙন দেখা দেয়। গত সোমবার থেকে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
দেবহাটা উপজেলা ভাতশালা এলাকার রাজির সরদার, শফিকুল ইসলাম জানান, গত সোমবার থেকে হঠাৎ করে ইছামতি নদীর বাঁধের ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যেকোনো মূর্হুতে বাঁধ ভেঙে নদীর পাড়ের ১৫০-২০০ পরিবারের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের প্লাবিত হতে পারে। এখনই বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে এসব পরিবার গৃহহারা হতে পারে।
তারা বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে বছর বছর আমাদের সম্পদ হারাতে হয় না। রিং বাঁধ দিলে অনেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীর মধ্যে চলে যেয়ে গৃহহীন হয়ে পড়বে। অনেক আগে থেকে ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙনরোধ করতে আমরা বার বার বলে আসছি।
দেবহাটা উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) আব্দুল মতিন জানান, পাউবোর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে বাঁধ ভেঙে বাংলাদেশের ভূখণ্ড নদীতে চলে যাচ্ছে আর ভারতের পাশে জেগে উঠছে চর। ভাতশালা এলাকায় ইছামতির ভয়াবহ ভাঙনে পাউবোর বেড়িবাঁধের একাংশ নদীতে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরিভিত্তিতে সিমেন্ট ও পাথর দিয়ে তৈরি ব্লক ও বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিং করার জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা ভাঙনরোধে রিং বাঁধ দিতে চায়।
তিনি আরও জানান, ওই এলাকায় রিং বাঁধ দেওয়ার অবস্থা নেই। ১৫০-২০০ পরিবার ভাঙনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করে। রিং বাঁধ দিলে ওই পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে চলে যাবে। তারা গৃহহীন হয়ে পড়বে।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, সোমবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিমেন্ট পাথর দিয়ে তৈরি ব্লক ডাম্পিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডর ওই এলাকায় দায়িত্বরত সেকশন অফিসার (এসও) সাইদুর রহমান জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় তিনি ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পরিদর্শন করেছেন। কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় বাঁধ ভাঙন রোধে ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। কিন্তু স্থায়ী হচ্ছে না। বর্তমানে ভাঙনের মাত্রা ভয়াবহ হওয়ায় কেবল ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে রোধ করা যাবে না। ভাঙন কবলিত ওই এলাকাটিতে নতুন করে রিং বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয়রা রিং বাঁধ নির্মাণের পক্ষে মতামত দিচ্ছে না। তারা বলছেন ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করে রিং বাঁধ দিলে তারা অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়বেন।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি তারা আমাদের জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দশনা প্রদান করেছেন। ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ডাম্পিং করা হবে। দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণকারী ইছামতি ভাঙন দেখা দিয়েছে। সীমান্ত নদীর বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় বাংলাদেশে ভূখণ্ড হারাচ্ছে, এ বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড পাশাপাশি মানুষের জানমাল রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হবে।
নদী বন্দর/এসএইচ