এক সময় গরু-ছাগলের বিচরণ ভূমি ছিল তিস্তা নদীর চর। তবে বর্তমানে সেই চরের জমি আর পতিত নেই। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা রূপালি বালুচর এখন ঢাকা পড়েছে সবুজের চাদরে। মাঠজুড়ে সবুজ সমারোহে বাতাসে ঝিলমিল করে দুলছে ভুট্টার সবুজপাতা। এসব এলাকায় এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টার চাষ। ভাল ফলন, খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় এখানকার কৃষকেরা ঝুকে পড়েছে ভুট্টা চাষের দিকে। এতে প্রতি বছর ভুট্টা চাষ বাড়ছে ফলে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানী, টেপাখরিবাড়ি, পূর্বছাতনাই, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়িসহ ৬টি ইউনিয়নের ৯টি চরে ২ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমি আবাদযোগ্য। এসব জমিতে আবাদ হচ্ছে ভুট্টা, গম, বাদাম সরিষা, আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়া , পিয়াজ, রসুন, মরিচসহ ১০ ধরনের ফসল। তিস্তার চরগুলোতে মৌসুমে একবার আবাদ হয়। বর্ষার সময় পানিতে তলিয়ে থাকে চর এলাকাগুলো। একসময় চরের মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করত। তবে বর্তমানে পাল্টে গেছে চরের দৃশ্যপট।
চর এলাকার বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, চরের জমিগুলোতে অনেক কষ্ট করে চাষাবাদ করতে হয়। সময় মতো বীজ রোপণ বা সেচ না দিলে ভালো ফলন হয় না। হালের দাম বেশি, ডিজেল ও সারের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর আবাদে খরচ বেড়েছে। আমরা জমি পতিত ফেলে না রেখে বিভিন্ন ফসল আবাদ করি। এবছর বাদাম আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি উৎপাদন হবে ৭/৮ মণ। গম বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি গম পাওয়া যায় ৬ থেকে ৭ মণ।
চরের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। তবে বালুচরে পানি বেশি দিতে হয়। ভুট্টা চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ভুট্টা পাওয়া যায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ। চরের জমিগুলোতে মৌসুমে একবার আবাদ হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে কিছু জমিতে আমন আবাদ করা হয়। বিঘা প্রতি ৭ থেকে ১০ মণ ধান পাওয়া যায়।
ডিমলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: সেকেন্দার আলী বলেন, প্রায় ২০/২৫ বছর আগে চর এলাকাগুলো চারণ ভূমি হওয়ায় মানুষ চলাচলে অনুপযোগী ছিল। বর্তমান সময়ে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ, সরকারি সহযোগিতা পেয়ে চরগুলোতে সোনার ফসল ফলানোর প্রচেষ্টা চলছে। ২ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমির মধ্যে অধিকাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন ফসল আবাদের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।
নদী বন্দর/এসএইচ