হিমালয়ান সমতল অঞ্চল বলে খ্যাত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কৃষকেরা এবার বোরো আবাদের পরিবর্তে গম আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। চাষিরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গম আমদানি কমে যাবার আশঙ্কায় তারা গম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তারা বলছেন, গম আবাদে সেচ খরচ কম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার ব্যাপক ফলনও দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে এবার গমের দামও ভালো পাবার আশা করছেন তারা।
বিস্তীর্ণ মাঠ। যতদূর চোখ যায় দুলছে গমের শিষ। এরপর চারপাশে চোখ ঘোরালেও একই চিত্র চোখে পড়বে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কৃষি সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে। প্রতিবছর এই জমিগুলোতে বোরোর আবাদ করা হলেও এবছর চাষিরা চাষ করছেন গম।
তারা বলছেন, গমের আবাদে খরচ কম। খুব বেশি সেচের প্রয়োজন পড়ে না। অন্যান্য আবাদ করলে বছরে দুটি ফসল পাওয়া যায়। কিন্তু গমের আবাদ করলে একই জমিতে বছরে তিনটি আবাদ করা যায়। গমের পরে পাট, পাটের পরে তারা আমন আবাদ করবেন। ফলে গম আবাদ করলে লাভের পরিমাণটা বেশি। তাই এবার অনেক চাষিই গমের আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।
চাষিরা বলছেন, গমের ফলনও ব্যাপক। আবহাওয়াও অনুকূলে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম ঘরে তুলবেন তারা। তাদের আশা সঠিক ভাবে গমের ন্যায্য বাজার মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার। তবে চাষিদের সহযোগিতা করছেন না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এমন অভিযোগও করেছেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাটা পাড়া গ্রামের ফারুক হোসেন (৪৭) জানান, এবার দুই একর জমিতে গম লাগিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, একরে ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। তিনবার সার এবং তিনবার সেচ দিতে হয়েছে। বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মণ গম পাব আশা করি।
সদর উপজেলার সীতাগ্রামের সলেমান আলী (৬৫) জানান, গমের ফলন এবার ভালো হয়ছে। সরকার যদি ন্যায্য মূল্য দেয় তবে চাষিরা ভালো লাভবান হবেন। তবে কৃষি অফিস আমাদের খোঁজ নেয় না। তিন বিঘা গমের আবাদ করেছি একদিনও অফিসের কেউ খোঁজ নেয়নি। ধনী লোকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার বীজ দিয়ে আসে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তারা চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজউদ্দিন জানান, এবার গমের ফলন ভালো হয়েছে। গম পাঁকা শুরু হয়েছে। আর এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে গম কাটা শুরু হবে। এবার কৃষকের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে।
তিনি জানান, এবার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। এবার ৮৩ হাজার ৫’শ মেট্রিকটন গম উৎপাদনের আশা করছেন বলে জানালেন তিনি।
নদী বন্দর/এসএইচ