সিলেটে সুরমা, ধলাই, সারী ও লোভা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সুরমার নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। সিলেট সদর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়ছে।
বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নগরের নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা জলাবদ্ধতার পানি বেশিরভাগ এলাকা থেকে নেমে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১২৫ দশমিক ২ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ জুন) ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে শূন্য দশমিক ২ সেন্টিমিটার। তবে সকাল ১০টার পর থেকে সিলেটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
সকালে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বার্তায় এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ভোর ৬টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ছিল ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটারের বেশি হলে বিপৎসীমার ওপর ধরা হয়। তবে সকাল ৯টায় মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে কানাইঘাট পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার পানি কমে ১২ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর সিলেট সদর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। আজ ভোর ৬টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সুরমা নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সকাল ৯টায় সিলেট সদর পয়েন্টে পানি কমেছে ২ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর এ তিনটি পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। ভোর ৬টায় কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ১১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে এখানে পানি বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার।
ভোর ৬টায় কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার। মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে এখানে পানি বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। সকাল ৯টায় এ পয়েন্টে ৮ দশমিক ৮২সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। একইভাবে ভোর ৬টায় এ নদীর শেরপুর পয়েন্টে ৭ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৮ ঘণ্টার ব্যবধানে আজ সকাল ৯টায় লোভাছড়া নদীর পানি বেড়েছে ৩৮ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে লোভানদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সারী নদীর সারিঘাট পয়েন্টে গত ১৮ ঘণ্টায় পানি কমেছে ৬১ সেন্টিমিটার। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ১১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ সকাল ৯টায় এ নদীর পানি ১০ দশমিক ৮৯সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হদে দেখা গেছে। একই সময়ে কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর পয়েটে ধলাই নদীর পানি কমেছে ১০ সেন্টিমিটার।
গোয়াইনঘাট উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার কর্মকর্তা (পিআইও) শীর্ষেন্দু পুরকাস্থ বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। উপজেলাজুড়ে ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিপুল সংখ্যক উদ্ধারকারী (রেসকিউ) টিম রয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের জরুরি বার্তা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটের কানাইঘাটে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর মৌলভীবাজারের শেরপুরে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে আজ ও কাল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নদী বন্দর/এসএস