বিএনপির নেতারা সন্ত্রাসী আর রাজনৈতিক কর্মী গুলিয়ে ফেলেন বলে মন্তব্য করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সোমবার (২৬ জুন) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘নব্বই এর গণ অভ্যুত্থান’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নির্যাতন-নিপীড়ন করায় জাতির অর্জন অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে-এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে ১৪ বছরে জাতির অনেক অর্জন আছে এটি মির্জা ফখরুল স্বীকার করেছেন। সরকার কারও ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে না। যারা আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা করেছে এবং এখনও করছে, যারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের নেতৃত্বে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাদের দুর্বলতা হচ্ছে তারা সন্ত্রাসী আর রাজনৈতিক কর্মী গুলিয়ে ফেলেছেন। তারা নিজেরা রাজনীতির নামে সন্ত্রাস করেন বিধায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যে পার্থক্য করেন না। কিন্তু এ দুই কর্মসূচির মধ্যে পার্থক্য আছে।
চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে নিবন্ধনহীন আইপিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সারাদেশে এমন অভিযান চলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, টিভি চ্যানেলগুলোকে মাসে বিটিআরসিকে ২০ লাখ টাকার বেশি ফি দিতে হয়। সরকার ৫০টির মতো টিভি চ্যানেলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে, এর মধ্যে ৩৬টি টিভি সম্প্রচারে আছে। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে দেখবেন এসব টেলিভিশন চ্যানেলের মতোই বুম নিয়ে হাজির হয়। এদের কোনো অনুমোদন নেই। এরা চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রচার নীতিমালায় আইপিটিভি বা ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করা যায় না। তারা এ কাজটি করে। অনেকের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য চাঁদা নেয়, বিপক্ষে সংবাদ করার হুমকি দিয়ে চাঁদা নেয়। এ কাজগুলো সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে অভিযান চালানোর জন্য। যাদের বৈধ লাইসেন্স নেই, যারা চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে তারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়ার জন্য উল্টো টাকা নেয়। এবং মাসে মাসে তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা পাঠাতে হয়। এ অবৈধ কাজ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন, সে কারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের অসুবিধা হচ্ছে না তা নয়। তবে সার্বিকভাবে মানুষে মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। গত সাড়ে ১৪ বছরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আড়াই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাব করে দেখুন, একজন সাধারণ মানুষ যিনি শ্রমিকের কাজ করেন, আজ থেকে ১৪ বছর আগে সারাদিন কাজ করে কয় কেজি চাল কিনতে পারতেন, এখন কয় কেজি চাল কিনতে পারেন।
তিনি বলেন, সাড়ে ১৪ বছর আগে একজন রিকশাওয়ালা সারাদিন রিকশা চালিয়ে চার-পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারতেন, এখন কমপক্ষে ১০ কেজি চাল কিনতে পারেন বা আরও বেশি, ১০ থেকে ১৫ কেজি চাল কিনতে পারেন। কোন চাল কিনছেন? দেশে আগে মানুষ বলতো, মোটা ভাত, মোটা কাপড়। এখন মোটা চাল কোথাও বিক্রি হয় না। মোটা চাল বাজারে বিক্রিই হয় না, মোটা চাল এখন গরুকে খাওয়ায়, মোটা চাল এখন হাঁস-মরগিকে খাওয়ায়।
মন্ত্রী বলেন, আগে মানুষ বলতো ডাল ভাত, এখন মানুষ মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে কেন সেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখন আর মোটাভাত ও আর মোটা কাপড় নয়, এখন মোটা কাপড়ও কেউ পরে না, এটাই হলো পরিবর্তন। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তো সেজন্য অনেক সময় অনুধাবন করতে পারি না।
নদী বন্দর/এসএস