গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় উব্দাখালী, মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী, গুমাই ও গণেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তা, বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোমবার (৩ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে ওই নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে উপজেলার বাহাদুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজপাড়া, খলা-২, বড়খাপন, চৌহাট্টা, বাউসারী, হাইলাটী, রিকা, পোগলা, ভাটিপাড়াসহ প্রায় ৬০টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে। উপজেলা মোড়-মুক্তিরচর, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধারা, কলমাকান্দা-বিশরপাশা পাকা রাস্তা, গোরস্থান-সাউদপাড়া, গজারমারী-খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও কাঁচা রাস্তাসহ আরও অন্তত ১০টি রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।
খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক তার ইউনিয়নের তিনটি রাস্তায় পানি ওঠার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কলমাকান্দা-গোবিন্দপুর সড়কের বাউসাম রুমালীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় সড়কটির কিছু অংশ পানিতে ভেঙে যায়। এতে করে শনিবার সকাল থেকে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে তিনিসহ স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই সড়কটির মেরামত করা হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু আজ সকালে আবারও রাস্তাটি ভেঙে গেছে। পুনরায় মেরামতের কাজ চলছে।
পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক জানান, সকাল থেকে পানি বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনিয়নের কালাকোনা, জীবনপুর, গোয়াতলা, কৈলাটি, মঙ্গলসিধসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে ওই এলাকার মানুষ কিছুটা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় কতগুলো বিদ্যালয়ে বন্যার পানি এসেছে তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে বাহাদুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজপাড়া, খলা-২, বড়খাপন, চৌহাট্টা, বাউসারী, হাইলাটী, রিকা, পোগলা, ভাটিপাড়াসহ বেশ কিছু বিদ্যালয় মাঠে পানি ঢুকেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজখবর নিচ্ছি। জরুরি হট নম্বর খোলা হয়েছে। শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
নদী বন্দর/এসএস